অর্থনৈতিক সংকট, সুদহার বৃদ্ধি ও স্মার্ট রেট
মো. নুরুল আমিন
আমরা যদি মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কথা দিয়ে শুরু করি, তাহলে উনি যে ইঙ্গিতটি করেছেন যে, আমাদের ডলার বা অর্থনৈতিক সংকটটি কেটে গেছে। সংকট হয়তো কেটে যাবে। কিন্তু আমরা যদি চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে লক্ষ্য করি সেটি খেয়াল করে দেখবেন এখন যে, চ্যালেঞ্জগুলো বিরাজমান সেটি হচ্ছে হাই ইনফ্লেশন রেট, রিজার্ভের সংকট, আমাদের মেট্রো ইকোনোমিক ব্যবস্থা, ডলার সংকট ইত্যাদি। এছাড়া ব্যাংকে যদি সংকট আসে, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ওঠা-নামা করতে থাকে এবং চ্যালেঞ্জগুলো যদি দূর না হয়ে থাকে তাহলে সংকট একদম কেটে গেছে এই কথা আমরা বলতে পারি না। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চের আগে বা গত অক্টোবরের আগে একটি কনভেনশনাল সিস্টেম রেটের মধ্যে ছিলাম যা ৯ শতাংশ ক্যাপ ছিলো, ৬ শতাংশ আমানতের উপর ছিলো এবং ৯ শতাংশ লোনের উপরে ছিলো। সেখান থেকে আমরা স্মার্ট পদ্ধতিতে আসলাম। এর নিয়ম ছিলো ছয় মাসের মধ্যে সুদের হার বাড়বে, কিন্তু এই স্মার্ট পদ্ধতিটি অটো সিস্টেমে চলে এসেছে যা প্রতি মাসে সুদের হিসেব কমিয়ে রাখার জন্য ইন্টারমিশন করতে হচ্ছে। প্রথম দিকে ছিলো ১০.২০ শতাংশ, যখন স্মার্ট রেট ছিলো ৭ শতাংশের কিছু বেশি। ঠিক তার সঙ্গে ৩.৭৫ যোগ করা, তারপর ৩.৫০ যোগ করা পরবর্তী সময়ে যা হবে সেখানে যোগ করতে হবে ৩ শতাংশ। তার মানে আমাদের স্মার্ট রেট চলে গেছে ১০. ৩০ শতাংশে।
সুতরাং আমি বলতে চাচ্ছি এই যে, পুশ অ্যান্ড পুল এফেক্ট হলো মূল কারণ। অর্থাৎ পুল এফেক্টকে বলবো লোন, টাকা বা ক্রেডিটের ডিমান্ড যা ১০ শতাংশের নিচে আছে। পুশ এফেক্টটাই বেশি পুশ এফেক্ট হলো সরকার যেভাবে টাকা ধার করছেন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে সেটাকে পাল্লা দিয়ে ইনফ্লেশনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দীর্ঘদিন সুদের টাকা চাপিয়ে রাখা হলেও এখন তা অটো সিস্টেমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। মানি সাপ্লাইয়ের দাম বাড়ানোর জন্য সিস্টেম চালু করা, টাকা সরবরাহ যখন কমে যায় তখন বেশি খরচ বা অপ্রয়োজনে খরচ এমন খরচগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুদের হার বাড়ানো হয় টাকাকে কস্টলি করার জন্য। আসল বিষয় হলো রেগুলেটরদের উদ্দেশ্যই থাকে টাকাকে কস্টলি করার এবং সাপ্লাইকে কঠোর করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা। রেগুলেটররা যে উদ্দেশে সুদের হার বাড়িয়েছে সেটা সফল হতে নিশ্চয়ই ২/১ মাসের মতো সময় লাগবে। মার্চ মাসে সামান্য কমেছে আমি আশা করি ৫ সপ্তাহের মধ্যেই হয়তো আমরা এপ্রিলের ইনফ্লেশন পাবো বা মার্চ মাসেরটা পাবো। তখন যদি দেখি কমে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে যে, আমাদের ইমপ্যাক্ট ভালো হচ্ছে আবার এর বিপরীত হতে পারে তখন আবার দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। আমরা এখনো স্থিতিশীল পর্যায়ে আসিনি আমাদের রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা করতে হয় যেন একদিকে টান দিলে অন্য দিক থেকে টান আসবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় তাই আমরা ভারসাম্য বজায় রেখেই কাজ করছি।
ডলার সংকটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডলার সাপ্লাই বাড়লে ইম্পোর্ট বাড়বে আমরা ইম্পোর্টকে মাসে ৫ বিলিয়নে আটকে রাখার চেষ্টা করছি। যে দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হয় সে সময় ইম্পোর্ট নিয়ন্ত্রণ করলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করে। যার ফলে আমার ইম্পোর্টটা যেমন হবে তেমনি লোকাল মানি সাপ্লাই হবে। স্মার্ট চেক তৈরি হওয়ার কারণে অন্তত আমরা একটা ধারণা করতে পারছি যে, কোন দিকে যাবে সুদের হার। সরকার যদি বলে রেট বাড়বে তখন স্মার্ট রেট বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এর সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক আছে। স্মার্ট রেট কোনো মানি মার্কেটিং, সরবরাহ চাহিদার ওপর নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ এটি একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা। এর ইমপ্যাক্ট হচ্ছে স্মার্ট রেটের সঙ্গে আমরা যদি কিছু যোগ করি তাহলে সুদ বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট রেটের সঙ্গে বর্তমানে সাড়ে ৩ শতাংশের এর পরিবর্তে ৩ শতাংশ যোগ করতে বলেছেন এ ক্ষেত্রে যদি কিছুটা কমানো হলে অনেকের লোন নিতে সুবিধা হবে।
পরিচিতি : সাবেক সভাপতি , এসোসিয়েশন অব ব্যাংক এডিবি এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাত বিশ্লেষক। একাত্তর টিভির ইউটিউব পেজের অর্থ সংযোগ অনুষ্ঠানের ভিডিও কন্টেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম