ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেওয়া দাম ১৭৫ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা ২০ দিন পার হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না অধিকাংশ পণ্য
মাসুদ মিয়া: আর ৫দিন বাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর রমজান এলেই দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটনি। প্রতি বছরই রমজানকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বে নিত্যপণ্যেও দাম কমার হিড়িক থাকলেও দেশে বাড়ার হিড়িক রয়েছে। ২০দিন পার হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে মিলছে না অধিকাংশ পণ্য। রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেল ও খেজুরে শুল্ক-কর কমায় সরকার। এরপরও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। আর ৫দিন বাদে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রজমান মাসকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এদিকে গত ১৫ মার্চ গরুর মাংস, ছোলা, ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেয় সরকার। তাতেও সুফল মেলেনি। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। জীবনযাত্রার চলমান অচলাবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাশ নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষগুলো। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। যা আয় করেন তার বেশিরভাগই চলে যায় নিত্যপণ্যের বাজারে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি ব্যবস্থা থাকলেও এর সুফল দেখা যাচ্ছে না। খেটেখাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের মতোই বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে কোনো পণ্যই মিলছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এমন অভিযোগ তাদের। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করা হয়। অথচ দাম কমানোর ঘোষণা দিলে সেই পণ্য বাজারে কম দামে পেতে অনেক সময় লাগে। এ ব্যাপারে সরকারের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছরই রোজা এলেই জিনিসের দাম বাড়ে। পরে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষগুলো কিছুদিন লোক দেখানো অভিযান চালাবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবে এবং পণ্যের দাম ১০০ টাকা বাড়ার পর ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা কমবে। এটাই নিয়ম হয়েগেছে। রোজার কয়েক মাস আগেই পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রাজধানী মতিঝিল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস আগের দামেই ৭৫০-৮০০ বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৬৪ টাকা। ব্রয়লার মুরগির বেঁধে দেওয়া দাম ১৭৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ৬০-৬৫ টাকা বেশি দরে ২৩৫-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী বা কক মুরগির সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ২৬২ টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫৫ থেকে ৩৬০ টাকায়। রমজানের আরেক প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছোলা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ১২-১৫ বেশিতে ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডালের নির্ধারিত মূল্য ১০৬ টাকা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দরে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রকারভেদে প্রতি কেজি মুগ ডাল নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি দরে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়, মটর ডাল ২৫ টাকা বেশি দরে ১৬০ টাকায় ও খেসারি ডাল ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজন মুরগির ডিম ১৩৫ টাকা ও হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে বাজারে। বাজারে সবজি ও মাছসহ সবকিছু আগের মতো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করার কথা ২৯ টাকায়। কিন্তু বাজারের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন কিছুটা কমেছে বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, পেঁপে ৪০ টাকায়, করলা ৬০ টাকায়, পটল ৬০ টাকায়, ঝিঙা ৫০ টাকায়, টমেটো ৫০-৬০ টাকায়, শিম ৪০-৬০ টাকায়, শসা ৫০ টাকায়, ক্ষিরা ৫০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায়, ঢেঁড়স ৬০ টাকায়, আদা ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়। মাছের বাজারেও সরকার নির্ধারিত দামের কোনো প্রভাব নেই। রুই মাছের কেজি ২৯০ টাকা নির্ধারিত হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, কাতল মাছ ৫০ টাকা বেশি দরে ৪০০ টাকায়, পাঙাস ২০ টাকা বেশি ধরে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পোয়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, টেংরা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় আকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, চিতল ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এবিষয়ে মতিঝিল বাজারে ক্রেতা রুপা বলেন, যখন কোনো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায়। অথচ দাম কমানোর ঘোষণা দিলে সেই পণ্য বাজারে কম দামে পেতে অনেক সময় লাগে। তিনি বলেন, মাছ, মাংসের বাজারে যাওয়াই মুশকিল। সরকার দাম বেঁধে দেয় কিন্তু সেই দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তার কোনো তদারকি নেই। তিনি বলেন, নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত সবাই এখন বাজারে পিষ্ট। মানুষ এখন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম বাজার করে ও খায়। এবিষয়ে বেসরকারী কোম্পানির এক কর্মকর্তা হাবিব বলেন সব কিছুর দাম বাড়তি। আমার বেতন ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আগে সারা মাসের খরচ শেষেও ৫- ১০ হাজার টাকা বেচে যেত। সেখান থেকে কিছু টাকা যেত সঞ্চয়ে, কিছু টাকা মা বাবাকে দিতাম। আর স্ত্রী নিয়ে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটায়। এখন আর পারি না।