কারওয়ান বাজারের ১৯৪টি দোকান আমিনবাজারে স্থানান্তর হবে
মো. আখতারুজ্জামান : [১] প্রাথমিকভাবে কারওয়ান বাজারের পরিত্যক্ত ঘোষিত কাঁচামাল আড়ত ভবনের ১৭৬টি এবং এর দুই পাশে টিনের ছাউনিতে থাকা অস্থায়ী কাঁচাবাজারের আরও ১৮০টি দোকান রাজধানীর গাবতলী এলাকায় আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দ্রুতই কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
[২] ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ বলছে, কারওয়ান বাজারের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে দোকানের বরাদ্দপত্র দেওয়া হবে। এরপর তাদের নিজ দায়িত্বে দোকানের মালপত্র স্থানান্তর করতে হবে। না হলে স্থানান্তরে বাধ্য করা হবে।
[৩] কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাবতলীর যে জায়গায় আড়ত সরানোর কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ব্যবসায়ীরা যেতে রাজি না। কারণ, সেখানে আড়ত ব্যবসার উপযোগী করে স্থাপনা তৈরি করা হয়নি।
[৪] কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্যসচিব ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে তো ব্যবসায়ীদের আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। সব সুবিধা নিশ্চিত করেই ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তাই আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
[৫] তবে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাবতলীর যে জায়গায় আড়ত সরানোর কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ব্যবসায়ীরা যেতে রাজি না। কারণ, সেখানে আড়ত ব্যবসার উপযোগী করে স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। দোকানঘরের মতো আবদ্ধ কক্ষ বানানো হয়েছে। এমন জায়গায় আড়ত ব্যবসা হয় না। এ ছাড়া বাইরে মিরপুর শাহ আলী ও দিয়াবাড়ি বেড়িবাঁধে কাঁচামালের আড়ত আছে। এসব ব্যক্তিমালিকানাধীন আড়ত না সরালে গাবতলীতে কেউ যাবেন না।
[৬] গত মঙ্গলবার সকালে গাবতলীতে আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচাবাজারে প্রবেশ করার মাত্র একটি রাস্তা। ভেতরে উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি ভবনের চারটি ব্লক। এগুলোর নিচতলা ও বেসমেন্টে (ভূগর্ভস্থ অংশ) মোট ৬৯৭টি দোকান। দক্ষিণ পাশের ভবনে এত দিন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যান্ত্রিক শাখা ও উত্তর পাশের ভবনে বর্জ্য পরিবহন শাখার অস্থায়ী কার্যালয় ছিল।
[৭] কারওয়ান বাজার থেকে তো ব্যবসায়ীদের আর উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। সব সুবিধা নিশ্চিত করেই ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করা হচ্ছে। তাই আমিনবাজার পাইকারি কাঁচাবাজারে না যাওয়ার কোনো কারণ নেই।
[৮] মোতাকাব্বির আহমেদ, ঢাকা উত্তর সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অঞ্চল-৫) দক্ষিণ ভবন থেকে করপোরেশনের মালপত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেল। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তরের জন্য ভবনের দোকানগুলো নতুনভাবে রং করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে উত্তর পাশের ভবনে বর্জ্য পরিবহন শাখার কার্যক্রম চলতে দেখা গেছে। দেখা যায়, ভবনটির বি-১ ব্লকে কিছু দোকানের শাটার ভাঙা।
[৯] এর বাইরে করপোরেশনের যান্ত্রিক ও বর্জ্য পরিবহন শাখার ভারী যান, যন্ত্র ও বর্জ্য পরিবহনের গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। উত্তর পাশের ভবনের পেছনের দিকে (উত্তর-পূর্ব কোণে) রাখা হয়েছে অচল ও পুরোনো গাড়ি।
[১০] কাঁচাবাজারের দক্ষিণ-পূর্ব কোনায় পেছনের দিকে সিটি করপোরেশনের অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট। সেটা এখনো স্থানান্তর করা হয়নি।
[১১] কারওয়ান বাজার স্থানান্তর কমিটির সদস্য ও ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান বলেন, কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ভবনে থাকা ১৭৬ জন ব্যবসায়ীই শুধু ভবনের ভেতর দোকান বরাদ্দ পাবেন। অস্থায়ী কাঁচাবাজারের ১৮০ জন ব্যবসায়ীকে বাজারের পূর্ব পাশে খালি জায়গায় দোকান দেওয়া হবে। বেশির ভাগ দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে দক্ষিণ পাশের ভবনে। ঈদের আগেই পাইকারি কাঁচাবাজারের জায়গা ফাঁকা করা হবে বলেও জানান তিনি।
[১২] ঢাকা উত্তর সিটির সূত্র অনুযায়ী, কারওয়ান বাজার আড়ত ভবনে নিচতলায় ৪০০ বর্গফুটের ৬২টি ও দোতলায় ১৭০ বর্গফুটের ১১৪টি দোকান রয়েছে। আর আড়ত ভবনের দুই পাশে টিনের ছাউনির নিচে অস্থায়ী কাঁচাবাজারে ১৮০টি দোকান রয়েছে। ২০০ বর্গফুট আয়তনের এসব দোকান সম্পত্তি বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া।
[১৩] কারওয়ান বাজারে যেসব ব্যবসায়ীর নিচতলায় দোকান ছিল, তাঁদের আমিনবাজারেও নিচতলায় দোকান দেওয়া হবে। আমিনবাজারে যেহেতু দোকানের আকার কমবেশি ১৩০ বর্গফুটের, সে জন্য একেকজন ব্যবসায়ী তিনটি দোকান বরাদ্দ পাবেন। আর কারওয়ান বাজারে দোতলার ১১৪ জন ব্যবসায়ীকে বেসমেন্টে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে। দোতলার এই ব্যবসায়ীরা দুটি করে দোকান বরাদ্দ পাবেন। আর অস্থায়ী ১৮০টি দোকানের ব্যবসায়ীদের বসানো হবে কাঁচাবাজারের পেছনে খালি জায়গায়।
[১৪] কারওয়ান বাজার থেকে ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, ঈদের পর দ্রুত স্থানান্তর কাজ শুরু হবে। স্থানান্তরের তালিকায় থাকা ব্যবসায়ীদের বরাদ্দপত্র (আমিনবাজারের) দেওয়া হবে। এরপর তাদের নিজ দায়িত্বে স্থানান্তর হতে হবে। যদি তাঁরা না যান, জোর করে সরানোর প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
[১৫] ব্যবসায়ীরা আপসের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হবেন আশা করছেন জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে শান্তিতে আগের মতো ব্যবসা গুছিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য যা যা সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন, সব দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সালামির টাকাও নেওয়া হচ্ছে না।