দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সঠিক কৌশল অবলম্বনে ই-কমার্স হতে পারে অন্যতম হাতিয়ার
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] কৈশোরে পারিবারিকভাবে ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন সেলিম শেখ এবং মানসপটে গেঁথে রেখেছিলেন একদিন ব্যবসা করবেন। স্কুল কলেজের গণ্ডি শেষ করে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ারে সফলতা ধরা দিয়েছিল সেলিম শেখের।
[২] দেশের স্বনামধন্য কর্পোরেট হাউস কিংবা বিদেশি এনজিওতে সুনামের সঙ্গে কাজ করেও মনের মধ্যে কৈশোর থেকে সুপ্ত থাকা নিজের একটা প্রতিষ্ঠান, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান এসব স্বপ্নের বিচ্যুতি ঘটেনি। বাংলাদেশের ই- কমার্স ব্যবসায় যুক্ত হলো এক নতুন নাম নুরতাজ ডট কম। ইতোমধ্যে সাত বছর শেষ করে অষ্টম বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে নুরতাজ। এতদিনের যাত্রায় যেমন পেয়েছেন বিশ্বস্ত ক্রেতা তেমন তৈরি হয়েছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরবরাহকারীরা।
[৩] নতুন প্রজন্মের ই-কর্মাস যেসব সেবা দিয়ে এতদিনের অভিজ্ঞতায় নুরতাজ সে জায়গায় পৌঁছেছে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সেলিম শেখ। সাম্প্রতিক তার নিজের অফিসে ই- কমার্স ব্যবসা, বাংলাদেশের অবস্থান ও নিজের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে সাথে সে আলাপের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য।
[৪] রমজান চলছে, সামনে ঈদ ভোক্তা পর্যায়ে আপনাদের ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলো কেমন সাড়া পেয়েছে এমন প্রশ্নে সেলিম শেখ বলেন, সবার নিজস্ব কৌশল রয়েছে এমন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সব চেয়ে ভালো অফার দিয়ে ক্রেতাকে নিজের প্লাটফর্মে রাখার। সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট বিরোধী হাতিয়ার হতে পারতো ই-কমার্স প্লাটফর্ম যদি সরকার ও আমাদের নিয়ন্ত্রক সংগঠনগুলো কাঠামোগত কৌশল অবলম্বন করতো।
[৫] কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থামানোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতাম আমরা। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সঠিক কৌশল অবলম্বনে ই- কমার্স পারে অন্যতম হাতিয়ার।২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা কেমন এমন প্রশ্নে নুরতাজ ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সেলিম শেখ বলেন, আমি দেশের ব্যবসায় উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির শূন্যতা অনুভব করি, তরুণদের মধ্যে মানকিং ট্রেন্ড বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই উদ্ভাবনহীন একটা চলমান ধারায় প্রতিদিন কেউ না কেউ ব্যবসায়ী হিসেবে যুক্ত হচ্ছে কিন্তু ফলাফল কি পাচ্ছে, আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে চাই মৌলিক চিন্তার উদ্ভাবনী কল্পনাশক্তি নিয়ে মার্কেটে এলে কেউ নিরাশ হবে না।
[৬] ই-কমার্সে এখন আপনারা কি কি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি বলেন, আমরা তো সব পণ্যই ইনকরপোরেট করি, আপনার মহল্লার দোকান বা আড়তের কথা ধরেন ওদের ভ্যাট ইস্যু নেই। আমাকে কিন্তু এই ভ্যাট প্রক্রিয়ায় একটা ওভার চার্জ করতে হচ্ছে। সব স্তরে একই রকম ফি নির্ধারিত হলে সেটা ভ্যাট হোক বা ট্যাক্স বা অন্য যেকোনো কিছু , সব স্তরে একই রকম হোক।
[৭] এছাড়া সাম্প্রতিক বড় ব্যান্ড হিসেবে পরিচিত কয়েকটা কোম্পানির কাছে গ্রাহকের কোটি কোটি থাকা আটকে থাকা এবং সংবাদপত্রে মাধ্যমে জানতে পারি এসব অর্থপাচার হওয়ার তথ্য, এসব বিষয় ভোক্তাদের মধ্যে ট্রাস্ট ইস্যু তৈরি করেছে। অনেকে মার্কেটটা নিয়ে খেলে মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে আমরা সেটাকে ফিরিয়ে আনার জন্য অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। ক্যাশ অন্য ডেলিভারি অফার করে যদি ১৫ শতাংশ ফেক অর্ডার নিয়ে কাজ করতে হয় তবে ভাবুন মাত্র একটা অর্ডার নেওয়া থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে কতগুলো মানুষ যুক্ত থাকে।
[৮] তিনি আরও বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে একই প্লাটফর্মে আপনি সব পাচ্ছেন। আমরা আগে কি দেখেছি একজন মানুষ হাতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় নিয়ে বাজার করতে যান, ধরুন ছুটির দিনের পাঁচ ঘণ্টা বাঁচিয়ে মাত্র ৬০ টাকা ডেলিভারি খরচে ক্যাশ অন ডেলিভারি সার্ভিস অফার করছি আমরা। ভোক্তা পর্যায়ে জীবনমান উন্নয়নে ই- কমার্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
[৯] আর একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হয়, ম্যানুফ্যাকচারার যখন আমাদের মাধ্যমে বিপণন করে তখন কিন্তু তার বিক্রয় ও বিপণন খরচ কমে আসে, এ কম খরচে বিক্রয় করার জন্য যেটুকু সুবিধা আমরা চাই তা কখনোই পাই না। যদি আমরা সেই সুবিধা পেতাম তবে ভোক্তা পর্যায়ে আরও কম দামে পণ্য দিতে পারতাম।
[১০] নুরতাজে এখন আপনি কি মৌলিক কৌশল অবলম্বনের চিন্তা করছেন যা আরও সহজ করবে জীবনমান, তিনি বলেন, নুরতাজ উৎপাদক ও ভোক্তাকে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে চায় যেখানে কৃষকের পণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত কমবে, সরাসরি ক্রেতা কিনবে এবং প্রান্তিক কৃষক সঠিক মূল্য পাবে।
[১১] আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক আপনাদের কেমন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে এমন প্রশ্নে সেলিম শেখ বলেন, এটা পরিতাপের বিষয় দুনিয়া জুড়ে যখন ই-কমার্সের জয়জয়কার সেখানে আমাদের এখনো ইন্ডাস্ট্রি হিসেবেই দেখতে চায়না আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সেক্টরে দৃশ্যমান কোনো আর্থিক সুবিধা ব্যাংক থেকে এসেছে আমি শুনিনি। তবে দেখবেন বিদেশ থেকে বা ব্যক্তি পর্যায়ের ফান্ড কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছে।