ঈদে শেখেরচর বাবুরহাটে দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা
নরসিংদী প্রতিনিধি : [১] বলা হয়, দেশের ৭০ ভাগ দেশীয় খুচরা কাপড়ের চাহিদা মেটায় ঐতিহ্যবাহী শেখেরচর বাবুরহাট। পাইকারি থেকে খুচরা শাড়ি লুঙ্গি থ্রি পিসসহ সকল প্রকার কাপড়ের রমরমা ব্যবসা হয় এখানে। মাথার টুপি থেকে পায়ের মোজা- সবই পাওয়া যায় এক হাটে।
[২] এবছর ঈদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী এই হাটে ইতোমধ্যে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর ব্যবসায়ী নেতারা।
[৩] দেশের সবচেয়ে বড় হাট নরসিংদীর এই বাবুর হাট ঈদকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে। দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত হাটের অলিগলি। দম ফেলার যেন ফুরসত নেই কারও। সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত কাপড় পাওয়া যাওয়ায় পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা ক্রেতারাও হাটে ভিড় জমাচ্ছে।
[৪] ক্রেতা সমাগম বাড়ায় তৃপ্তির ঢেকুর দোকানিদের। তাই খুশি হাটের ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীরা। এক সময় কেবল প্রতি রোববারই হাট বসতো। এখন সপ্তাহে তিনদিন বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার হাট বসে। তবে ঈদ সামনে রেখে পুরো সপ্তাহ এখন চলছে কেনাবেচা।
[৫] কাপড়ের জন্য খ্যাতিসম্পন্ন বাবুরহাটে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন রঙ আর ডিজাইনের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিস, বেডশিট, পর্দা, গামছাসহ নানা পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হাটের প্রায় ৫ হাজার দোকানি। পাইকারি ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে হাটের অলিগলি। এবছর বাবুরহাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েন।
[৬] থ্রি পিস বিক্রেতা রবিন মোল্লা বলেন, ঈদ উপলক্ষে ৫০-এর বেশি ধরনের থ্রি পিস কালেকশন রাখা হয়েছে। এর মধ্যে এবার বাজারে খুবসুরত, গঙ্গা, সানাসাফিনা, মিরাকি, নাজ, মির্জার চাহিদা তুঙ্গে। দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে এসব থ্রি পিস পাওয়া যাচ্ছে।
[৭] আরেক ব্যবসায়ী সাব্বির বলেন, সারা বাংলাদেশ থেকে পাইকাররা হাটে আসছে। গত দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসা ভালো হয়নি। রমজানের শুরুতে প্রথম সপ্তাহে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে। এবার বাজার কাচাবাদাম ও পুস্পার দখলে। এই থ্রি পিসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
[৮] কাপড় ব্যবসায়ি রাসেল আলামিন বলেন, প্রতি পিস কমদামি কাপড়ের দাম ন্যূনতম ৫০ টাকা থেকে ১শ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে থ্রি পিস ও লুঙ্গির দামও। তাই পাইকারি ক্রেতারা কম কাপড় ক্রয় করছে।
[৯] কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম মির্জা বস্ত্রালয়ের মালিক জসিম মিয়া বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর যাবৎ বাবুর হাট থেকে কাপড় থ্রি পিস লুঙ্গিসহ সব ধরনের কাপড় ক্রয় করি এবং তা কুমিল্লায় এনে বিক্রি করি। এখানকার কাপড়ের মান যেমন ভালো তেমনি দামও অন্য হাট থেকে সাশ্রয়ী। তাছাড়া এখানকার কাপড়ের চাহিদা রয়েছে।
[১০] ভৈরব থেকে বাবুর হাটে কাপড় কিনতে এসেছেন নারী উদ্যোক্তা শিলা । তিনি বলেন, নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাট সবচেয়ে জনপ্রিয়, তার কারণ হলো-এক বাজারে সব কিছু পাওয়া যায়। অর্থাৎ শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি পিস, বেডশিট, পর্দা, গামছাসহ সকল ধরনের কাপড় এক জায়গাতেই সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। তাই আমাদের কাছে প্রথম পছন্দ বাবুরহাট।
[১১] বাবুরহাট বাজার বণিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক মনিরুল জামান মনি বলেন, এবছর বাবুরহাটে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণে অনেকটাই ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। শেষ হাটে লেনদেনের পরিমাণ আরও বাড়বে।
[১২] নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোমেন মোল্লা বলেন, বস্ত্র জগতের প্রধান কেন্দ্র বাবুরহাট। এবার এখনই প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে।
[১৩] তিনি বলেন, এখানে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ব্যবসায়ীরা লেনদেন করতে পারেন। দূর-দূরান্তের ক্রেতারা যাতে স্বস্তিতে কাপড় কিনতে পারেন, সেজন্যে পুরো হাটকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।