সামগ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে নামিয়ে দিয়েছে
মাহা মীর্জা
চন্দ্র অভিযানের পর ভারতের ইসরোর বিজ্ঞানীদের নিয়ে যখন আলাপ শুরু হলো, কিছুটা কিউরিওসিটি থেকেই ইসরোর বিজ্ঞানী/প্রকৌশলীদের প্রোফাইল ঘাটাঘাটি করছিলাম। আমার মূলত ধারণা ছিল ইসরোর ইঞ্জিনিয়ার বা সাইন্টিস্টরা ক্যালটেক গ্রাজুয়েট’ টাইপ। অর্থাৎ, ক্যালিফোর্নিয়াতে অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স পড়া, দীর্ঘদিন নাসায় কাজ করে দেশে ফেরত এসে ইসরো তে যুক্ত হয়েছে, এমন আর কি। অথচ ইসরোর ৬ জন নারী বিজ্ঞানী আর বাদবাকীদের প্রোফাইল দেখে রীতিমতো আশ্চর্য হলাম।
এরা সকলেই ভারতীয় গ্রাজুয়েট! এবং দেশে থেকেই সবসময় কাজ করেছেন!
আর সবাই যে আইআইটি খড়্গপুর/আইআইটি বোম্বে – মোটেও তা নয়। বরং বেশিরভাগই ভারতের বিভিন্ন গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে ফিজিক্স, গণিত বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। মৌমিতা দত্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। মিনাল রোহিত গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের। রিতু কারিঢাল লখনৌ ইউনিভার্সিটির। এদের মধ্যে কেউ কেউ কোয়েম্বাতোর বা বেঙ্গালুরুর সরকারি প্রকৌশলী কলেজ থেকেও এসেছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই।
তারমানে পৃথিবীর সেরা এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি আসলে কারা গড়ে তুলেছেন? রাশিয়া আমেরিকাকে টেক্কা দিয়ে চাঁদের ডার্ক সাইডে সর্বপ্রথম রকেট পাঠালো কারা? তাদের প্রোফাইল কি? তারা তো সকলেই দেখি ভারতের সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালগুলো থেকে লেখাপড়া করা! আমি বেশ ধাক্কা খেলাম।
আমাদের এখানকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাশ করে চাঁদে রকেট পাঠানো, মঙ্গল গ্রহে স্যাটেলাইট পাঠানো, ভাবা যায়?
দেশের ৬৪ জেলা থেকে তীব্র প্রতিযোগিতা করে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে আসে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণরা। আমাদের ভেরি বেস্ট ওয়ান্স।
অথচ আমাদের সামগ্রীক রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক মানকে কোথায় নামিয়েছে সেটা সবাই জানে। ৬ বছরের শিক্ষা জীবনে এই ছেলেমেয়েগুলোর স্বপ্ন ও সম্ভাবনা বিপন্ন হয়। দায় নেবার কেউ নেই।
আজকে অর্থনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের মাস্টার্সের শেষ পরীক্ষা ছিল। কাকতলীয় ভাবে শেষ পরীক্ষাটাই আমার ক্লাসের।
৪৬ কে আমার মনে থাকবে। সুন্দর কিছু ছেলেমেয়ে। ইন্টার্যাকটিভ, ফানি, অ্যান্ড ফুল অফ লাইফ। পুরো একটা বছর ক্লাসের পর আজকে বিদায় দিতে মন খারাপ হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি লাইন থেকে বেরিয়ে বিধ্বস্ত অর্থনীতির সীমিত জব মার্কেটে যে যার মতো কাজ জোগাড় করে নেবে নিশ্চই সবাই। লেখক : শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়