আমদানি না হলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বেড়ে যাবে
ড. আহসান এইচ মনসুর
আমি দুটো জিনিসের কথা উল্লেখ করবো। তার মধ্যে একটি হচ্ছে কোভিড। কোভিড শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক অর্জনকে বিসর্জনে রূপান্তর করেছে। যেমন স্কুল ড্রপ-আউট। গত কয়েকদিন আগে আমি একটি খবর পড়ছিলাম যে নিউইয়র্কে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী নেই বা অনেক কম। যারা আছে তারাও ঠিকমতো আসে না স্কুলে। কোভিডের পর সেটি আর স্বাভাবিক হয়নি। উন্নত দেশে যদি এরকম হয় তাহলে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে কী হতে পারে তা আমরা ভাবতে পারি। অন্য যে জিনিস সেটি হচ্ছে বাল্যবিবাহ। এটি আমাদের মারাত্মক একটি উদ্বেগের কারণ। সত্যি কথা বলতে এটি খুবই দুঃখজনক একটি জিনিস, যা আমাদের কালচারের মধ্যে আছে। অবস্থাসম্পন্ন ঘরের লোকও মেয়েদের ক্লাস সেভেন এইটে থাকতেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। একরকম জোড় করেই দিয়ে দিচ্ছে। এই যে মানসিকতা, এটি আমাদের আগে থেকেই ছিলো এবং করোনার জন্য আরো বেড়ে গেছে। তখন যেহেতু স্কুলও ছিলো না, তাই অভিভাবকরা মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়াকেই একমাত্র কাজ বলে মনে করতো। যা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
প্রথমত আমরা লাখ লাখ ছেলেমেয়েকে স্কুলে ফেরত আনতে পারছি না যারা বেরিয়ে গেছে, দ্বিতীয়ত আয় বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। একদিকে আমরা দারিদ্রতা কমানোর কথা বলছি, অন্যদিকে আয় বৈষম্যের পাল্লা একদিকে ভাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ধনীরা সংখ্যায় কম, সম্পদে বেশি। এটি শুধু বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, ধনী দেশগুলোতেও আছে। আমেরিকায় বলা হয় ১০ ভাগ লোক ৮০ ভাগ সম্পদের মালিকানা লাভ করে। ভারতেও এই প্রবণতা খুব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ২০২২ সালে যে লেটেস্ট হাউজ হোল্ড সার্ভেটি আসলো, আমরা সেটি বিশ্লেষণ করে দেখলাম যে টপ ১০ ভাগ মানুষের হাতে প্রায় ৫০ভাগ ইনকাম। সেটি শুধু ইনকামের দিক থেকে। সম্পদের দিক থেকে দেখলে আমি মনে করি সেটি ৮০-৯০ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশের এমন একটি অবস্থা যে ঢাকা শহরে বা অন্য কোনো শহরে বাড়ি-ঘর কেনার মতো সক্ষমতা সাধারণ মানুষের আর হবে না। এই যে পোলারাইজেশন হয়ে যাচ্ছে সোসাইটিতে সেটি আমদের ভাবায়। আমি মনে করি সরকারকেও ভাবানো উচিত। ম্যাক্রো ইকোনোমিক ইমব্যালেন্সের কথা এতোদিন ধরে চলে আসছে, সেটি এখনো আছে। কিন্তু কিছুটা সহনীয় হয়েছে আমি বলবো। এখানে কয়েকটি জিনিস কাজ করছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের ইম্পোর্ট কম্প্রেশন হয়েছে প্রচুর। আগে যে আমদানি আমরা করতাম তার থেকে এখন অনেক কম আমদানি করি। ফলে এখানে আমাদের সাশ্রয় হচ্ছে। এটি একদিক থেকে ভালো আবার অন্যদিক থেকে অতো ভালো না। ভালো না কারণ আমদানি আমাদের দরকার আছে। আমদানি না হলে মূল্যস্ফীতির উপর চাপ বেড়ে যাবে। আবার অন্যদিকে এই জিনিসটি না হলে আমার ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট স্টিমুলাইজড হবে না। সরকার দেরিতে এবং সীমিত আকারে হলেও ইন্টারেস্ট রেট কিছুটা ছাড় দিয়েছে। নয়-ছয় থেকে তারা বেরিয়ে গেছে।
লেখক : পলিসি রিসার্চ ইন্সিটিউটের নির্বাহী পরিচালক। চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রা অনুষ্ঠানের ভিডিও কনটেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন সঞ্জয় চন্দ্র দাস