চাপ বাড়বে ভ্যাটে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে
সোহেল রহমান : [১] আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হতে পারে। বর্ধিত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক খাতে আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে ভ্যাটের আওতা বাড়ানো হলে বা ভ্যাটের হার বাড়ানো হলে পরোক্ষভাবে তা সাধারণ জনগণের ওপরই পড়বে। ফলে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার ওপর যে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেটা না কমে বরং মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আগামী অর্থবছরে সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাড়তি রাজস্ব আদায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক থেকে সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
[৩] সূত্র জানায়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি আদায় করা হবে পণ্য ও সেবা খাতের ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে। আগামী বাজেটে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা রয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ট্যাক্সেস অন ইনকাম অ্যান্ড প্রফিট খাত থেকে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে। [৪] প্রসঙ্গত: চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআর-এর আওতাধীন রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
[৫] জানা যায়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের টিকেটমূল্যের ওপর ভ্যাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। স্থানীয় শিল্প ভ্যাটে যে ছাড় পেয়ে আসছে, আগামী অর্থবছরে তা সংকোচিত করা হতে পারে। এর প্রভাবে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যমূল্যও বাড়বে এবং চূড়ান্ত বিচারে ভোক্তাদেরই তা পরিশোধ করতে হবে। [৬] প্রসঙ্গত: চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক খাতে ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল এনবিআর। গত জানুয়ারি শেষে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
[৭] জানা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।
[৮] এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ট্যাক্সেস অন ইনকাম অ্যান্ড প্রফিট থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে যা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
[৯] অন্যদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কাস্টমস ডিউটি থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ কম।