অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শেয়ারবাজার চাপের মুখে
শাকিল রিজভী
বাংলাদেশে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শেয়ারবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক খাতের কারণে শেয়ারবাজার প্রভাবিত হয়। ব্যাংকের সুদ বাড়লে শেয়ারবাজার খারাপের দিকে যায়, এটি চিরন্তন সত্য। শেয়ারবাজারের সূচক আগে ছিলো ১০, এখন হয়েছে ৬Ñ যার জন্য শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পরেছে। আর্থিক খাতে ঋণ খেলাপি ব্যাংক, নন-পারফর্মিং লোনের কারণে শেয়ারবাজারে প্রভাব পড়ে, ধস নেমে আসে। শেয়ারবাজারের প্রায় ৩৮ শতাংশ মূলধন ব্যাংকের আওতায়। আমাদের দেশে লিস্টেড কোম্পানির ব্যাংকগুলো যদি দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে শেয়ারের দাম কমে গিয়ে সূচক নেমে যায়। ফলে অন্য শেয়ারের ওপরেও এর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং আর্থিক খাত শেয়ারবাজারকে অনেকটাই প্রভাবিত করে।
২০১১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৩৭.৮৬ শতাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে ছিলো। দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বর্তমানে উর্ধমুখী না হয়ে একলাফে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে, যেটি ভালো লক্ষণ নয়। বিনিয়োগকারী বৃদ্ধি পাওয়ার চেয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বিনিয়োগকারী বাড়লে শেয়ারের দাম বাড়বে, তেমনি বিনিয়োগকারী কমে গেলে শেয়ার দাম কমে যাবে। এর দুটো কারণ হতে পারে- প্রত্যাশার চেয়ে কম অর্থ লাভ দেওয়া, বেশি দামে শেয়ার কেনা এবং ব্যাংক সুদ বাড়লে মানুষ সঞ্চয়পত্র ব্যাংকে রাখার জন্য ধাবিত হয়। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে শেয়ার সূচক বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিও একাউন্ট কমে যাচ্ছে যার প্রধান ও প্রথম কারণ হলো, আইপিও শেয়ার। মানে হলো এক পরিবারের ৪-৬ জন সদস্যের নামে শেয়ার লটারিতে পাওয়ার সুযোগ নেই, একজনের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে একাধিক একাউন্ট খোলা যাবে না, একজন ব্যক্তির নামে সর্বোচ্চ তিনটি একাউন্ট থাকতে পারবে এর অধিক শেয়ার কেনা যাবে না। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে আইনি প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেই বিও একাউন্ট শেয়ারবাজার থেকে ঝরে যাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যায় যে, শেয়ার বিক্রি করা।
অনেকেই বেশি দামে শেয়ার কিনে প্রত্যাশানুযায়ী লাভ করতে পারেনি। মানুষের কথায় কান দিয়ে অনেকেই টাকা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ লাভ করতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফোর্সড সেল করে দিয়েছে, অনেকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকায় বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। আরেক দল আছে যারা আইনি ব্যবস্থার কারণে বিও একাউন্ট কমছে। তবে শেয়ারবাজারের সূচকের ওঠা-নামা থাকলেও কোম্পানির শেয়ার কোনো দিন বিনিয়োগ ছাড়া ছিলো না। একজন হতাশ হয়ে না কিনলে অন্য কেউ এসে ঠিকই স্বল্পমূল্যে বিনিয়োগ করেছে, তারপরও সূচক নিম্নমুখুখী ছিলো। শেয়ারে বিনিয়োগ করার জন্য সুশাসন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। দাম বাড়ানোর বিষয়ে যদি অডিটের রিপোর্টগুলো ঠিক থাকে তখন দাম বাড়বে আর বিনিয়োগকারীরা যদি অডিটরের ওপর বিশ্বাস না রাখে আস্থা হারিয়ে থাকে তাহলে ভেজাল হবে। অডিটরের দায়িত্ব বিনিয়োগকারীদের কাছে আস্থা অর্জন করা। মোট কথা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। লেখক : শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি। মুঠোফেনেমতামত গ্রহণ করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম