মহাখালী টার্মিনালে ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার একটু বেশিই ছুটি পেয়েছেন চাকরিজীবীরা। ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ার ফলে এবার রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোয় নেই তেমন চাপ। পাশাপাশি অনেকটা ভোগান্তি ছাড়াই ঈদযাত্রা করতে পারছেন যাত্রীরা। [২] গতকাল রোববার রাজধানী মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল কিছুটা যাত্রী চাপ বেড়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় তা অনেকটাই কম। প্রায় নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো। নেওয়া হচ্ছে না বাড়তি ভাড়াও। ফলে এই টার্মিনাল থেকে ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ির পথ ধরছেন যাত্রীরা। [৩] মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সবচেয়ে বেশি যাত্রী দেখা যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে এনা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টারে। রাস্তায় যানজটের কারণে তাদের বাসের সংকট রয়েছে। তবে কিছুক্ষণ পর পরই বাস আসছে এবং যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। [৪] এনা ট্রান্সপোর্টের কাউন্টার মাস্টার অন্তর বিশ্বাস বলেন, গত তিন দিনের তুলনায় আজ যাত্রী বেশি। সকালে অনেক যাত্রী ছিল, এখন কিছুটা কম। রাস্তায় যানজটের কারণে টার্মিনালে আমাদের বাস নেই। তাই একটু বেশি যাত্রী মনে হচ্ছে। তবে একটু পর পরই বাস আসছে। যাত্রী উঠলেই আমরা সেগুলো ছেড়ে দিচ্ছি। গার্মেন্টস ছুটি হলে, তখন যাত্রীর চাপ বাড়বে।তিনি আরও বলেন, সকাল সাড়ে ৪টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমাদের ৫২টি বাস ময়মনসিংহ রুটে ছেড়ে গেছে। রাস্তায় যানজট না থাকলে আরও বেশি যেতো। কোনো বাসই খালি যাচ্ছে না। [৫] পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ময়মনসিংহ যাচ্ছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মারুফুজ্জামান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কাউন্টারে তেমন ভিড় নেই। এবার লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি যেতে পারছি। কোনো বাড়তি ভাড়াও দিতে হয়নি। [৬] একই কথা বলেন খুলনায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আলদ্বীনা ভাবনা। খুলনা থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ছুটি পাওয়ায় বাড়ি যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে এবার বেশি সময় কাটাতে পারব। খুলনা থেকে ঢাকা আসতে এবং মহাখালী টার্মিনালে টিকেট কাটতে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। আশা করি, কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাড়ি পৌঁছাতে পারব।
[৭] ঢাকা-বগুড়া-নওগাঁ রুটে যাত্রীসেবা দেওয়া শাহ ফতেহ আলী বাসের কাউন্টার মাস্টার হান্নান বলেন, যাত্রী কিছুটা বাড়লেও চাপ নেই। এখনও সবার অফিস বন্ধ হয়নি। সরকারি ছুটি শুরু হলে তখন যাত্রী বাড়বে। [৮] একই রুটে যাত্রীসেবা দেওয়া একতা পরিবহনের বুকিং মাস্টার বিপ্লব বলেন, ঈদে যেমন যাত্রী চাপ থাকার কথা তা এবার মহাখালীতে নেই। লম্বা ছুটির কারণে মানুষ ধীরে যাতায়াত করছে। [৯] পরিবার নিয়ে বগুড়া যাচ্ছেন মনিরুজ্জামান রাসেল। তিনি ও তার স্ত্রী নরসিংদীতে শিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, সময় মতোই বাস ছাড়ছে এবার কোনো ভোগান্তি হচ্ছে না। অন্যান্য বছর বাড়তি ভাড়া, ঠিকমতো গাড়ি না ছাড়া, যানজট হয়। এবার সেটি নেই। অনেকটা নির্বিঘ্নেই বাড়ি যেতে পারছি।ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), র?্যাব ও ডিএমপির সদস্যরা কাজ করছে। পাশাপাশি মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতিও সচেষ্ট রয়েছে।
[১০] মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. শওকত আলী বাবুল বলেন, গত কয়েকদিনের মতো আজও তেমন যাত্রী নেই টার্মিনালে গাড়ি আছে ৫০০, কিন্তু যাত্রী এক হাজারও নেই। সকালবেলা কিছু যাত্রী ছিল। এখন যাত্রী নেই বললেই চলে। মূলত, এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় একসঙ্গে চাপ পড়ছে না। মানুষ ধীরে ধীরে যাচ্ছে।
[১১] তিনি আরও বলেন, কেউ যাতে বাড়তি ভাড়া না নেয় সেজন্য আমরা একেবারে শুরু থেকেই কাজ করছি। আমরা প্রতিটি কাউন্টারের সামনে ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকেও একটি তালিকা টানানো আছে। পাশাপাশি আমরা কিছুক্ষণ পর পর মাইকিং করছি। তারপরও বিআরটিএ, র?্যাব ও পুলিশ সদস্যরা এখানে কাজ করছে। কোনো যাত্রী অসুবিধায় পড়লে সেখানে অভিযোগ করতে পারবে। আর আমাদের অফিস তো আছেই।