বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আট ধরনের চ্যালেঞ্জ রপ্তানি বাড়াতে আসিয়ানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত : আইসিসিবি
সোহেল রহমান : [১] স্বল্পোন্নত দেশ-উত্তর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রপ্তানি বাড়াতে পণ্য বৈচিত্রকরণের পাশাপাশি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার বিষয়টি বাংলাদেশের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত বলে মনে করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসিবি)।
[২] সদ্য প্রকাশিত সংগঠনের এক ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়-তে এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
[৩] ত্রৈমাসিক বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রাধিকার গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাজ্য অতিরিক্ত তিন বছরের জন্য অগ্রাধিকারমূলক শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে অন্যান্য বাজারে রপ্তানির পরিস্থিতি স্নাতকের পরপরই পরিবর্তিত হবে।
[৪] আইসিসি’র মতে, ৩.০৮ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি এবং ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যসহ ৬৬১ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত আসিয়ান অঞ্চলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। গত ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো থেকে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর বিপরীতে রপ্তানি মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে আসিয়ান-এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
[৫] আইসিসি বলেছে, চিত্তাকর্ষক প্রবৃদ্ধির হার সত্ত্বেও রপ্তানি ঝুড়ির বৈচিত্রকরণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি পোশাক রপ্তানি থেকে আসে। চামড়া এবং পাদুকা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসেম্বলিং প্যান্টস এবং এপিআই উৎপাদনে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ খাতগুলোতে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং এফডিআই উভয়ই বাড়াতে হবে।
[৬] ত্রৈমাসিক বুলেটিনে বলা হয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রবর্তন এবং অন্যান্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেও এফডিআই আকর্ষণে বাংলাদেশ মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এফডিআই হল রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপাদান। বাংলাদেশের উচিত এফডিআই আকর্ষণের জন্য ভিয়েতনামের কৌশল পর্যালোচনা করা। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলেএফডি আই আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পর ভিয়েতনাম চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
[৭] আইসিসি’র মতে, চলতি পঞ্জিকা বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আট ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এগুলো হচ্ছেÑ ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বাজেটের ঘাটতিসহ পরিশোধের ভারসাম্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, রেমিট্যান্স সংকোচন, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ক্রমবর্ধমান আয় বৈষম্য এবং এনার্জি খাতে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, ঋণ খেলাপি দ্বারা পঙ্গু ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত ইত্যাদি। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলেও অধিকাংশ দেশে তা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
[৮] আমদানিকৃত জ্বালানীর ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে প্রায় আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এছাড়া নবায়নযোগ্য ও ক্লিনটেক বিকল্পের অভাব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎ্স অনুসন্ধানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা, তেল এবং এলএনজি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
[৯] এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
[১০] অন্যদিকে বিভিন্ন বড় মেগা প্রকল্প যেমনÑ পদ্মাবহুমুখী সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকার সাথে কক্সবাজারের রেলওয়ে সংযোগ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এগুলো অধিকাংশ শেষ হয়েছে এবং চলতি বছরে এগুলোর সুফল পাওয়া শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
[১১] আইসিসি বলেছে, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজকের অবস্থান অর্জন করেছে। নিম্নস্তরের মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চস্তরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি এবং আর্থ-সামাজিক সাফল্যের প্রধান চাবিকাঠি। প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে লক্ষ্যমাত্রামূলক পদক্ষেপ এবং যথাযথ নীতি অনুসরণ করে সময়োপযোগী বাস্তবায়নের মাধ্যমে, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।