নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে তিন উদ্যোগ অপরিহার্য
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ঠেকাতে সরকার সম্প্রতি চালের দর বেঁধে দিয়ে মানুষের মনে যে রাগ, ক্ষোভ কমাতে চেয়েছে। এটা একপ্রকার আইওয়াশ করা হয়েছে। বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে দর বেঁধে দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে প্রথমতো, অবাধ যোগান ব্যবস্থা এবং দ্বিতীয়তো, পুরো পণ্য আমদানি ও সরবরাহ যা কতিপয় কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে এবং দরদাম নির্ধারণ করে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সর্বপ্রথম কতিপয় কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তৃতীয়তো, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য সরবরাহ করার সময় কৃষকদের চাঁদাবাজির কবলে পরতে হয়। এসকল কাজের সঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রসাশনিক লোক জড়িত থাকে। ক্রমাগত চাঁদাবাজি ঘটতে থাকলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে ঠিকই কিন্তু কৃষক সঠিক দাম পায় না। এ তিনটি বিষয়ে উদ্যোগ না নিলে বাজারে দাম বেঁধে দিলেও লাভ হবে না।
সরকার চালের দাম বেঁধে দিয়েছে তার মানে এই নয় যে, বাজারে চালের ঘাটতি আছে। পরিসংখ্যানে চালের কোনো ঘাটতি নেই। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কারণে বহু মানুষের ক্যালরির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। জনগণের চাহিদানুযায়ী যে যোগান আছে তাতে ঘাটতি থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে কতিপয় কোম্পানি ব্যবসায়িক স্বার্থে কৌশল অবলম্বন করে বাজারে দর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাজারে সিন্ডিকেট আমদানিকারক, পাইকারি সরবরাহকে কয়েকটি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করে। কতিপয় গোষ্ঠী যখন পুরো প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে বাজার সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করে সেটাকে বাজার সিন্ডিকেট বলে। এমনকি এরা বাজারে পণ্যের দাম নির্ধারণ, সরবরাহ, বাজার প্রক্রিয়াকেও এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। কতিপয় গোষ্ঠিই হলো বাজারের সিন্ডিকেট।
বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি না বলে বাজারের ওপরে একচেটিয়া কতিপয় গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ দূর করা জরুরি কথাটা এভাবে বলা দরকার। কতিপয় গোষ্ঠী পণ্য সরবরাহ, দরদাম নিয়ন্ত্রণ করছে তাই আমাদের আগে এ দিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাজার তার নিজের গতিতে চলতে থাকবে। এছাড়াও আমাদের দেশে যেহেতু যোগান আছে তাই দামবৃদ্ধির কোনো কারণ আমি দেখছি না।
পরিচিতি : অর্থনীতিবিদ। মুঠোফোনে মতামত গ্রহণ করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম