দেশে দরিদ্র ও ধনী শ্রেণির টাকাপয়সায় পার্থক্য
লুৎফর রহমান হিমেল
অফিসের পথে যেতে যেতে পান্থপথে দেখি বিশাল লম্বা গাড়ির সারি। বসুন্ধরা সিটিতে ঢুকছে সব গাড়ি। গাড়ির আরোহীরা সবাই শপিংয়ের জন্য যাচ্ছেন। পরে সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা বলতে থাকলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই। গাড়ি আর শপিং মলে ঢুকবে না। কারণ তিল ধারণের ঠাঁই নেই পার্কিংয়ে। এ অবস্থায় সার্ক ফোয়ার থেকে শুরু করে পান্থপথ সিগনাল পর্যন্ত দুই লেনের রাস্তার চার সাইডে গাড়ি পার্কিং করে রাখতে থাকেন চালকরা। এই অবস্থা যখন বসুন্ধরা সিটিতে, একই দশা ছিলো যমুনা ফিউচার পার্কেও। সেখানে পার্কিংয়ের একেকটি গাড়ি বের হতে সময় লেগেছে দেড়-দুই ঘণ্টা। মানে এতো বেশি গাড়ি সেখানে গেছে শপিং করতে। গাড়ি গেছে মানে, গাড়ির যাত্রীরা গেছে শপিং করতে।
তো এই হচ্ছে ঈদে কেনাকাটা করা মানুষের ভিড়ে ঠাঁসা শপিং মলগুলোর দৃশ্য। ঈদে যারা শপিং করছেন, তাদের হাতে বেশুমার টাকা। শপিং মলে গেলে বুঝা যায় না যে, মানুষের টাকার অভাব নেই। কিন্তু ওই দৃশ্যই সব নয়। যাদের হাতে টাকা নেই, তারা কেনাকাটায় বের হচ্ছেন না। এই সংখ্যাটিই বিপুল। দেশে দরিদ্র ও ধনী শ্রেণির টাকাপয়সার পার্থক্য এতোটাই বেড়েছে এখন যে, কোনো পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের একটি করে গাড়ি আছে। আবার কোনো পরিবারে গাড়ি তো দূরে থাক, তিনবেলা খাবার জোটানোও কষ্টের তাদের জন্য। ঈদের কেনাকাটা তাদের জন্য বিলাসিতা। নানা কারণে দেশে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে দেশে একটি শ্রেণি নানা দুর্নীতির মাধ্যমে ধনী হয়ে গেছে। ৫, ১০ বছর আগেও রিক্সা-বাসে যাতায়াত করা লোকেরাও এখন অঢেল টাকার মালিক হয়ে বিলাসগাড়িতে চলছে। এদের অনেকে এমন সব গাড়িতে যাতায়াত করছেন যে, তাদের সেসব গাড়ির নাম জিজ্ঞেস করলে সেগুলোর নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারবে না। কিন্তু তারা সেগুলোর মালিক এখন। যাক সে কথা। গত বছর নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ-এক্স তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিলো, বাংলাদেশে ভয়ানকভাবে ধনী বাড়ছে। ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হারের হিসাবে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান হবে বিশ্বে তৃতীয়।
যাদের কাছে এক থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার আছে তাদের ধনী হিসেবে ধরা হচ্ছে। যারা বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে তারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালান ইত্যাদি উপায়ে করে থাকে। দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, অবৈধভাবে টাকা পাচারকারীরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। এর বেশির ভাগই শিকার হচ্ছেন নিম্নমধ্যবিত্তরা। তারা না পারেন রিক্সা চালাতে, না পারেন মাছ বিক্রি করতে। ফলে ছয় ঋতুর দেশ যেমন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে তিন ঋতুতে পরিণত হয়েছে, তেমনি দেশে মধ্যবিত্ত্ব বিলুপ্ত হয়ে উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্ত্বে পরিণত হয়ে গেছে। সরকার যত যা ই করুক যদি দুর্নীতির লাগাম না টানে, কোনো কাজেই তারা সফল হবে না। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক