মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে না, বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
সোহেল রহমান : [১] মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে নাÑ বলে দাবি করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
[২] তিনি বলেন, দেশে আমদানি-নির্ভর পণ্যের দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য বিকল্প দেশ থেকে পণ্য আমদানি ও সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে।
[৩] মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস-এ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
[৪] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন, হামাস-ইসরায়েল বা ইরান ও ইসরায়েল হামলা, এসব আন্তর্জাতিক। তবুও মধ্যপ্রাচ্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখান থেকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্য আসে। যুদ্ধ বা হামলার কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়। এতে পরিবহন খরচ বাড়ে, যার প্রভাব পড়ে নানা পণ্যে। আমদানি-রপ্তানিতে সঙ্কট তৈরি হয়। তবে ইসরায়েলে ইরানের হামলা হঠাৎ করে, ইসরায়েল আবার ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে কি না জানি না। তবুও সব বিষয় মাথায় রাখা হচ্ছে। এসব কারণে যাতে পণ্যের দাম না বাড়ে, সেজন্য আমরা বিকল্পভাবে পণ্য আনার চেষ্টা করছি। [৫] টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ)-এর পণ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১ কোটি মানুষকে টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দেয়া হচ্ছে। আরও কী কী পণ্য ন্যায্যমূল্যে দেয়া যায়Ñ সেটা নিয়ে কাজ চলছে। টিসিবি কার্ড পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই মারা গেছেন, আবার নতুন করে অনেকেই যুক্ত হবেন। এজন্য টিসিবি’র তালিকা হালনাগাদ করা হবে।
[৬] টিসিবি’র পণ্যকে স্থায়ী দোকানের মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবি সাধারণত একত্রে চার থেকে পাঁচটি পণ্য সরবরাহ করে। কিন্তু অনেক সময় এমন হয়, একটি পণ্য পৌঁছাতে দেরি হলে ডিসিরা বাকি পণ্যগুলো আটকে রাখেন, সবগুলো পণ্য একত্রে দেবেন বলে। কিন্তু যখন ফিক্সড দোকান হবে, তখন যে মাল যখনই দোকানে চলে যাবে, তখনই সেই মাল বিক্রি শুরু হবে।
[৭] মাঝে মাঝে টিসিবি’র পণ্য সরবরাহে সমস্যার বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিন কারণে মাঝে মাঝে টিসিবি’র পণ্য সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। এক হলোÑ বাফার স্টক না থাকায় আমাদের পণ্য কিনেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়েও আমাদের বাফার স্টক নেই। দ্বিতীয়ত: আমাদের সংরক্ষণের জন্য স্টোরেজ নেই এবং ডিলারদেরও ১৫ দিন বা একমাস পণ্য রাখার মতো নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। এ তিন কারণে টিসিবির পণ্য সরবরাহে ৭ বা ১০ দিন আগে-পিছ হচ্ছে।
[৮] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, জরুরিভিত্তিতে পণ্য সরবরাহ ও সেবা নিশ্চিত করতে টিসিবি শুরু হয়েছিল। পরে এটাকে একটা কাঠামোতে নিয়ে আসতে আমরা কাজ করছি। আমাদের নিজস্ব কোনো গুদাম ছিল না। যে কোনো পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখতে সেটার বাফার স্টক থাকা দরকার। আর বাফার স্টকের জন্য গুদাম দরকার। চট্টগ্রামে আমরা ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি নতুন গুদাম করেছি। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গুদাম করছি। চেষ্টা করবো দ্রুত যেন বাফার স্টক তৈরি করতে পারি।
[৯] বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে যে জিনিস ভালো পাওয়া যায়, আমরা সেটা সংগ্রহ করে টিসিবির মাধ্যমে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিতরণ করবো। টিসিবির পণ্য হতদরিদ্র মানুষের জন্য নয়। কারণ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকায় পণ্য ক্রয় করার ক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য এমন মানুষদের সম্পৃক্ত করবো যাতে নিম্ন, মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ তাদের একটু সুযোগ-সুবিধা দিতে পারি।
[১০] তিনি বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে নজর দিচ্ছি সেটা হলো পণ্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো। এত কিছুর মধ্যেও গত তিন মাসে, প্রতি মাসে আমরা রপ্তানি বাড়িয়েছি। এখন আমরা আমদানিতেও বহুমুখীকরণ করতে চাচ্ছি। যাতে একটি স্থান বা দেশের ওপর নির্ভর না থাকতে হয়। আমরা অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
[১১] ভোজ্যতেলের দাম প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, তেলে ৫ শতাংশ ডিউটি কমিয়েছিলাম, এতে ভোক্তা পর্যায়ে ১০ টাকা কমেছিল তেলের দাম। বর্তমানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের ট্যারিফ কমিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। দেখা হচ্ছে মিলাররা কী দামে তেলের কাঁচামাল আনছেন তার দাম কেমন পড়ছে ইত্যাদি বিষয়ে।
[১২] প্রসঙ্গত: রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেলের আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ কমায় এনবিআর। ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ গত সোমবার (১৫ এপ্রিল) শেষ হয়েছে।
[১৩] বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ইতোমধ্যেই তেলের দাম আগের অবস্থায় নেয়ার প্রস্তাব করেছেন মিল মালিকরা। তেলের দাম বাড়াতে গত সোমবার বাণিজ্যসচিব-কে চিঠি দিয়েছেন মিল মালিকরা।
[১৪] জানা যায়, মিল মালিকদের চিঠিতে বোতলজাত ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা এবং খোলা ১ লিটার পাম তেলের দাম ১৩২ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
[১৫] মিল মালিকদের চিঠির বিষয়ে বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ চিঠির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি এখনো পাইনি, যদি পাঠিয়ে থাকেন অফিসে গিয়ে দেখতে হবে।