সমৃদ্ধি সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ, পিছিয়ে স্বাধীনতা সূচকে
সোহেল রহমান : [১] ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচ্ছল’ হলেও সমৃদ্ধি সূচকে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকে এ দুই দেশ থেকে পিছিয়ে আছে দেশটি।
[২] অতি সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিল-এর ‘ফ্রিডম অ্যান্ড প্রসপারিটি ইন বাংলাদেশ’(বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন মূল্যায়ন করা হয়েছে।
[৩] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমৃদ্ধি সূচকের তালিকা করার জন্য স্বাস্থ্য, বৈষম্য, পরিবেশগত অবস্থা, সংখ্যালঘু অধিকার এবং শিক্ষা সহ মাথাপিছু জিডিপির মতো বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকের তালিকা করার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আইনি অবস্থার পরিমাপ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্বাধীনতা সূচক এবং সমৃদ্ধি সূচকের উপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক এবং শাসন সূচক ব্যবহার করে একটি জাতির অর্থনৈতিক অবস্থানের মূল্যায়ন করা হয়েছে। [৪] প্রতিবেদনে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশকে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচ্ছল’ এবং স্বাধীনতা সূচকে ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরাধীন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। [৫] গত ২০২৩ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রণীত এ প্রতিবেদনে সমৃদ্ধি সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৪৬তম এবং পাকিস্তানের অবস্থান ১৫০তম। তবে উভয় দেশকেই ‘অস্বচ্ছল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সমৃদ্ধি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র শ্রীলঙ্কা-কে বৃহত্তর সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সূচকে এর অবস্থান ৭২তম। এছাড়া ভূটান ও নেপালের অবস্থান যথাক্রমে ১১১তম ও ১৩১তম। [৬] অন্যদিকে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম, যেখানে ভারত ১০৪তম এবং পাকিস্তান ১১৩তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে এ সূচকে ভূটানের অবস্থান ৬১তম, নেপালের অবস্থান ৮৬তম এবং শ্রীলঙ্কা ৯৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায়র দেশগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়া অন্যান্য দেশের অবস্থান যথেষ্ট ভাল।
[৭] প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে যে, মৌলিক স্বাধীনতা জোরদার করলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে গতিশীল করে। স্বাধীনতা সূচকে উন্নতির জন্য রাজনীতি, সরকার ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিতে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
[৮] প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সমৃদ্ধি সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যভাবে ১৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তালিকায় বারবার ওঠানামা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ উন্নতি করেছে এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক গড় পয়েন্ট থেকে ৩.৯ পয়েন্ট বেশি আছে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের সাথেও ব্যবধান কমিয়ে এনেছে। শুরুতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড় থেকে ৯.১ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে ৪.৮ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে।
[৯] প্রতিবেদনে বিভিন্ন উপাদানের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ‘মিশ্র’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এই অগ্রগতি সামগ্রিক সমৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক অগ্রগতির উপর জোর দিয়ে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে রাখছে।
[১০] স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বৈষম্য এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের আরো বেশি অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আরও খারাপ হয়েছে।
[১১] প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত তিন দশকে বাংলাদেশে আয়ের ভালো উন্নতি হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ১৩৮তম অবস্থান থেকে ২০২২ সালে বাংলাদেশ ১১২তম স্থানে উঠে এসেছে। গত তিন দশকে বাংলাদেশের আয়ের স্কোর ১৯.৮ পয়েন্ট বেড়েছে।
[১২] ন্যায়সংগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এবং আয়ের বৈষম্য কমাতে আটলান্টিক কাউন্সিল প্রগতিশীল কর নীতিমালা বাস্তবায়ন, শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচিতে বিনিয়োগ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে।
[১৩] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানের কাঠামোগত সমস্যা সমাধান করা উচিত এবং একটি সার্বজনীন ও সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি তৈরি করতে ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা উচিত।
[১৪] এদিকে অগ্রগতি সত্ত্বেও শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনও দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গড় থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
[১৫] আটলান্টিক কাউন্সিল মনে করে, বাংলাদেশকে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। শুধু সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধিই নয়, শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
[১৬] প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় আইনি কাঠামো এবং আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে।