সব মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আগামী জুনের মধ্যে সচিবালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সব মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
[২] এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের নিমন্ত্রণ ও ভিজিটিং কার্ড, ফাইল ফোল্ডার ইত্যাদি লেমিনেটিং করা যাবে না। সভাকক্ষে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতল বা পরিবেশবান্ধব উপাদনসংবলিত পুনঃব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহার করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন এক চিঠিতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। [৩] চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ছুরি, চামচ, প্লেট, গ্লাস, বেলুন, খাবারের মোড়ক ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। [৪] পাশাপাশি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী সব মন্ত্রীকে এ বিষয়ে আধা-সরকারি পত্র (ডিও) পাঠিয়েছেন।
[৫] একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়, এমন প্লাস্টিকের পণ্যকে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বলা হয়। প্লাস্টিক পচতে কয়েক শতাব্দী সময় নেয়। এছাড়া ঠিকমতো না সামলালে এসব প্লাস্টিক সমুদ্র, স্বাদু পানি ও স্থলভাগের বাস্তুতন্ত্রকে দূষিত করে।
[৬] কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চিঠি পাওয়ার পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। [৭] মন্ত্রণালয়গুলো প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা জারি করেছে। ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, ছুরি, চামচ ব্যবহার বন্ধ করেছে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়। তবে পানির বোতল, মোড়ক, ফোল্ডারে প্লাস্টিকের ব্যবহার এখনও চলছে।
[৮] খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) প্রদীপ কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পাওয়ার আগে থেকেই খাদ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সচেতন।
[৯] যেসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ব্যবহার না করে পারা যায়, সেসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের কোনো ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয় না। বিশেষ করে প্লাস্টিকের কাপ, প্লেট, প্যাকেট ব্যবহার করা হচ্ছে না। পানির ক্ষেত্রে এখনও প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করতে হচ্ছে, বলেন তিনি। [১০] সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রেখা রানী বালো বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। [১১] পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম গত ৪ এপ্রিল জানিয়েছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাকে আরও কার্যকর করতে ঈদের পর সব মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে।
[১২] তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যে সচিবালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করা হবে। আরেকটি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, যেভাবে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটি খুব বাস্তবসম্মত নয়।
[১৩] তিনি বলেন, প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার কমানো কঠিন। পানির বোতলের বেলায় তা আরও কঠিন। কারণ এগুলোর বিকল্প বাজারে নেই। এজন্য বাজারে বিকল্প পণ্য সরবরাহ না বাড়লে এই উদ্দেশ্য শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হবে না, বলেন তিনি।
[১৪] নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৫ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এই ২০০ দিনের কর্মসূচিতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়।
[১৫] প্লাস্টিক দূষণের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ গত ফেব্রুয়ারিতে এক চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেন। এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ উদ্যোগ নেয়।
[১৬] ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশের শহরাঞ্চলে দৈনিক ৩০ হাজার টন মিশ্র কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে ১০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য। এই হিসাবে বছরে প্রায় ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে দেশের শহরাঞ্চলে।
[১৭] বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার বরাত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, প্লাস্টিক বর্জ্যের ৩৬ শতাংশ পুনর্ব্যবহৃত হয়, ৩৯ শতাংশ ভাগাড়ে ফেলা হয়। বাকি ২৫ শতাংশ নদী ও সমুদ্রে পতিত হয় যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন।
[১৮] ওই চিঠিতে পরিবেশ সচিব বলেন, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। অপরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া এবং পুনঃব্যবহারের ফলে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে পরিবেশ ও প্রতিবেশের সুরক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
[১৯] চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ধীরে ধীরে দেশের মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে। প্লাস্টিক বা পলিথিন পরিবেশে দীর্ঘদিন বিদ্যমান থেকে মাটি, পানি ও বায়ুর ক্ষতির পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে।
[২০] পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার সব ধরনের প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে।
[২১] এই কর্মপরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল নিশ্চিত করতে চায় সরকার। আর ২০২৬ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সূত্র: টিবিএস