ডিএসইতে ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে সূচক টানা পতনে দিশেহারা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার গতকাল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ব্যাপক দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে। টানা পতনে দিশেহারা হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। যারা চোখেমূখে অন্ধকার দেখছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। ঈদের পর চার কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে চার কার্যদিবসই দর পতন হয়। চার কর্মদিবসে ডিএসই’র সূচক কমেছে ১৮২ পয়েন্ট।
[২] এবিষয়ে বাজার বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সোমবার ইসরায়েলে ইরানের রকেট হামলার প্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও বড় পতন হয়েছে। কিন্তু পরের দিন থেকে বিশ্বের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পতনের বৃত্তেই আটকে আছে। আর যেভাবে পতন হয়েছে, এর কোনো কারণ বাজার সংশ্লিষ্টরাখুঁজে পাচ্ছেননা। তাঁরা বলছেন, বড় বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার জন্যই এখন পতন ঘটাচ্ছেন।
[৩] এবিষয়ে বিনিয়োগকারী জামান বলেন, শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিন মাস ধরে শেয়ারবাজার মন্দার মধ্যে রয়েছে। তবে মাঝে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখে গেলেও সার্বিকভাবে বাজার পতনের মধ্যে রয়েছে। জামান আরও বলেন, অধিকাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী লোকসানের মধ্যে রয়েছেন। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
[৪] গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৮৭ পয়েন্টে। এর আগে ২০২১ সালের ৯ মে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে অবস্থান করে ৫ হাজার ৬৪৬ পয়েন্টে। [৫] গতকাল লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এ পতন প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২৯টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৬৮৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার কমলেও ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫২২ কোটি ৫১ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮২ কোটি ৫৩ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৯ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেস্ট হোল্ডিংয়ের ৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম।
[৬] এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, গোল্ডন সন, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং ফুড, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফু-ওয়াং সিরামিকস এবং মালেক স্পিনিং। [৭] অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৭টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।