রাজবাড়ীতে ৩ দিনব্যাপী বাংলা উৎসব শুরু
রাজবাড়ী প্রতিনিধি : [১] বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও যথাযথ চর্চা এবং সাহিত্যের প্রতি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হতে যাচ্ছে নবম বাংলা উৎসব।
[২] জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বর্ণ মিছিলের মাধ্যমে শুভ সূচনা হবে বাংলা উৎসবের। বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবম বাংলা উৎসবের উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম। এছাড়া তিন দিনব্যাপী বাংলা উৎসবে দেশের খ্যাতনামা বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। [৩] এ উৎসবে থাকবে গুণীজন সংবর্ধনা, আবৃত্তি, নৃত্য, পুঁথি পাঠ ইত্যাদি। প্রায় ৫০টির মতো বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় এবার অংশগ্রহণ করবে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকছে বর্ণ লিখন, বর্ণ পরিচয়, শব্দ তৈরি, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দেয়াল পত্রিকা, কুইজ, বিতর্ক, ছড়া লিখন, এক কথায় প্রকাশসহ প্রায় ৫০ রকমের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক প্রতিযোগিতা।
[৪] রাজবাড়ী একাডেমির সভাপতি সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি, ভাষা ও সাহিত্যের ঐশ্বর্যের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজবাড়ী একাডেমির উদ্যোগে আমরা প্রতিবছর বাংলা উৎসবের আয়োজন করে থাকি। এ উৎসবে জেলার সহস্রাধিক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে থাকে। এ বছরও আমরা বাংলা উৎসবের আয়োজন করেছে। এবারের অনুষ্ঠান হবে তিন দিনব্যাপী।
[৫] তিনি আরও বলেন, বাংলা উৎসব ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা এখানে ভাষা ও সাহিত্যের চর্চার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের এবারের নবম বাংলা উৎসবে আরও কিছু নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। প্রথমবারের মতো এবার বিশেষ বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি প্রতিযোগিতা ইতোমধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দারুণ সারা ফেলেছে। আমরা প্রাক বাংলা উৎসব ভাষা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই পর্ব সম্পন্ন করেছি। উৎসব মঞ্চে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
যশোরে গ্রীষ্মের শুরুতেই নলকূপেও মিলছে না পানি
যশোর প্রতিনিধি : [১] তীব্র গরমে যখন সাধারণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা তখনই পানি সংকটে পড়েছেন যশোরবাসী। গ্রীষ্মের শুরুতেই কমতে শুরু করেছে জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।
[২] প্রতি বছরই গ্রীষ্ম মৌসুম শুরু হওয়ার আগে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই পানির স্তর নামতে শুরু করে। ফলে অধিকাংশ পাম্প ও নলকূপে পানি মিলছে না। দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে দৈনন্দিন ব্যবহৃত ও সুপেয় পানি। খবর- ঢাকাপোস্ট
[৩] যশোর পৌরসভাসহ জেলার চারটি উপজেলায় এ পানি সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে যশোর পৌর এলাকায় পানির স্তর ৩৪ থেকে ৩৬ ফুট নিচে নেমে গেছে। অন্যান্য চার উপজেলায় ৩২ ফুটের নিচে নেমেছে পানির স্তর। এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ দিন দিন পানি সংকট গুরুতর হলেও মিলছে না স্থায়ী সমাধান। ফলে প্রতি বছরই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। [৪] সরজমিনে যশোর পৌরসভার বারান্দীপাড়া, শংকরপুর, ধর্মতলা, কাজীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার বাসাবাড়ির টিউবওয়েল, পাম্পে পানি উঠছে না। [৫] পানি শূন্যতায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে এ সব নলকূপ ও পাম্প। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের পানি সংগ্রহ করতে হয় দূর-দূরান্তের পানির উৎস থেকে। যেখানে সামান্য পানি পাওয়া যায় সেখানে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। [৬] বারান্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, প্রায় প্রতি বছর মাঘ মাস যেতে না যেতেই টিউবওয়েলের পানি শুকিয়ে যায়। দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। বছরের অর্ধেক সময় আমাদের পানির কষ্ট ভোগ করতে হয়। [৭] একই এলাকার গৃহিণী রিনা পারভীন বলেন, প্রতি বছর এক পানির সমস্যা নিয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। সরকারি অনেক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি দেখতে এসে কত আশ্বাস দেয়। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দুর্দশা এখনো কাটেনি। [৮] শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা আরীফ শেখ বলেন, এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে খাবার ও গোসল করার পানি সংগ্রহ করতে হয়। মানুষের বাড়িতে পানি আনতে গেলেও কথা শুনতে হয়।
[৯] পৌরসভার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌর এলালায় সাপ্লাই পানির লাইন থাকলেও সেখানে পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ পাওয়া যায় না। দিনের অধিকাংশ সময় সাপ্লাই পানির সরবরাহ বন্ধ থাকে। তাদের অভিযোগ, নিয়মিত কর পরিশোধ করলেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কোনো স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
[১০] শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, বাৎসরিক পৌর কর নিয়মিত পরিশোধ করার পরও পৌরসভার বড় বড় সমস্যাগুলো কর্মকর্তারা দেখে না। এই পানি সমস্যা আজকের নয়, এটা দীর্ঘদিনের। প্রতিবছরই বিভিন্ন গণমাধ্যম আমাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে, কিন্তু স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই।
[১১] সাধারণত যশোর পৌরসভা এলাকায় পানির স্তর ২০ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। যদি তা ২২ থেকে ২৩ ফুটের নিচে নেমে যায়, তাহলে বাসাবাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ এই মুহূর্তে যশোর পৌর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ ফুট নিচে।
[১২] যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি নিষ্কাশন) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, যশোর পৌরসভার পানির লেয়ার বর্তমানে ৩৪ থেকে ৩৬ ফুট নিচে আছে। অনেক এলাকার নলকূপে ও পাম্পে পানি উঠছে না। আমাদের এ মুহূর্তে ১৯টি পাম্প চালু আছে, বাকি ১০-১২টি পাম্প অকেজো অবস্থায় আছে। আমরা ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। অধিক হারে পাম্প চালিয়ে পৌরবাসীর পানির চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি।
[১৩] তিনি আরও জানান, এর আগে ২০২১ সালে ৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাই। এ প্রকল্পে কয়েকটি উত্তোলন নলকূপ এবং কিছু পাইপ লাইন সম্প্রসারণের কাজ করা হয়।
[১৪] যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেন, যশোর জেলায় চারটি উপজেলায় পানির সংকট বেশি দেখা দিয়েছে। সদর ও শার্শা উপজেলায় ৩৪ ফুট, চৌগাছা উপজেলায় ৩২ ফুট এবং মনিরামপুর উপজেলায় ৩০ ফুট নিচে পানির স্তর নেমেছে। যেকারণে অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না। শহর অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি গ্রামঞ্চলের মানুষকে সুপেয় ও ব্যবহৃত পানি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
[১৫] তিনি আরও বলেন, যশোর জেলায় বর্তমানে সাড়ে ১২ হাজার সাবমার্সিবল পাম্পযুক্ত নলকূপ চালু আছে। এ সব পাম্প চালিয়ে ওই সব অঞ্চলের পানির চাহিদা পূরণের জন্য উপজেলা অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।