সড়কে মৃত্যুর জন্য দায়ী অবহেলা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা
কল্লোল মোস্তফা
বাসের সাথে সংঘর্ষে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে গেছে একটা পিকআপ ট্রাক। এই ঘটনায় পিকআপ ট্রাকে থাকা ১৪ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু বাসের কোন যাত্রীর মৃত্যু ঘটে নাই।
সংঘর্ষে পিকআপ ট্রাকের যাত্রীদের মৃত্যু ঘটেছে কারণ পিকআপ ট্রাক মালামাল পরিবহনের জন্য তৈরী, যাত্রী পরিবহনের জন্য নয়। পিকআপ ট্রাকের বডি যাত্রী পরিবহনের উপযুক্ত নয়। পিকআপ ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করা হলে দুর্ঘটনায় যাত্রী ছিটকে পরে কিংবা দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটার ঝুঁকি বেশি।
তাহলে পিকআপ ট্রাকে করে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহন করতে দেয়া হলো কেন? হাইওয়ে পুলিশের কাজ কি তাহলে?
এতো গেল পিকআপের সমস্যা। এবার দেখা যাক বাসটির কি অবস্থা। ফরিদপুরে ইউনিক পরিবহনের যে বাসটির সাথে সংঘর্ষে পিকআপের এতগুলো যাত্রী মারা গেল, সেই বাসটির ফিটনেস সনদ, রুট পারমিট কিছুই ছিল না। বাসটির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে, এরপর আর ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়নি।
বাসটি ঢাকা-মাগুড়া রুটে চললেও বাসটির রুট পারমিট বা চলাচলের অনুমোদন ছিল চট্টগ্রাম-বগুড়া পথে, অবশ্য সেটির মেয়াদও ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছিলো। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৭৫ ধারা অনুসারে, ফিটনেস সনদ ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ৭৭ ধারা অনুসারে, রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি চালালে তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা।
সড়ক পরিবহনের আইনের এইসব ধারা লংঘন করে যানবাহন চালনা করা হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট এবং হাইওয়ে পুলিশের।
কিন্তু দেখা গেল সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ধারাগুলো লঙ্ঘন করে কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই দূরপাল্লার এই বাসটি ৩ বছর ধরে ফিটনেস ছাড়া এবং ২ বছর ধরে রুট পারমিট ছাড়া চলছিল অথচ কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অনিয়ম আরো আছে, বাসটি ইউনিক পরিবহনের নামে চললেও ইউনিক পরিবহনের মালিক শামসুল হুদা বাসটি বেশ কয়েক বছর আগে নাজমুল হোসেন নামে একজনের কাছে বাসটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন, অথচ নাজমুল হোসেন ইউনিক পরিবহনের নামেই বাসটি পরিচালনা করছিলেন।
দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো সড়কে গর্ত থাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুসারে, দুর্ঘটনার স্থানে মহাসড়কে বেশকিছু খানাখন্দ ছিল। ফলে বাসের চাকা গর্তে পড়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে বাসটি হঠাৎ মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়, এবং তাতে ধাক্কা দেয় পিকআপ।
কাজেই আপাত দৃষ্টিতে দুর্ঘটনা মনে হলেও ১৪ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী অবহেলা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা।
যদি পিকআপে যাত্রী পরিবহন করতে দেয়া না হতো, যদি বাসটির যথাযথ ফিটনেস থাকত এবং যদি দ্রুতগতি যান চলাচলের রাস্তায় গর্ত না থাকত- তাহলে এই অকাল মৃত্যু ঘটতো না।