বাণিজ্যিক উৎপাদনের অপেক্ষায় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা
সোহেল রহমান : [১] উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ মাস পরও দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানাটি এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি চালু হলে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ টন সার উৎপাদিত হবে এ কারখানা থেকে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এই কারখানাটি এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না। [২] জানা যায়, গত বছর ১২ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ বাকি রেখেই ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা উদ্বোধন করা হয়। তিন দশকের এ কারখানাটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন সার কারখানা। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নতুন করে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন এবং প্রকল্পের শুরু থেকেই বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল প্রস্তুত করা হয়েছে। সংস্কার ও আধুনিকায়নের পর এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা। কারখানার দুটি বাষ্পীয় গ্যাস জেনারেটর ৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম এবং প্ল্যান্টটি চালানোর জন্য ২৮ মেগাওয়াট প্রয়োজন। পরিবহন সুবিধার লক্ষ্যে ঘোড়াশাল রেলস্টেশনের সঙ্গে কারখানার সংযোগের জন্য রেললাইন নির্মাণের কাজ এখন চলছে।
[৩] সরকার বলছে, কারখানায় উৎপাদিত সার দেশের সার আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়তা করবে। পরিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক এ সার কারখানা বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদনে সক্ষম। এটি বাংলাদেশের প্রথম সার কারখানা, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্লু গ্যাস থেকে পরিবেশ দূষণকারী আহরণ করা হবে এবং ক্যাপচার করা কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে ইউরিয়া সারের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে (প্রায় ১০ শতাংশ)। এটি দেশে অত্যাধুনিক, শক্তি সাশ্রয়ী ও সবুজ সার কারখানা, যা ইউরিয়া সারের আমদানি কমিয়ে দেবে এবং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। [৪] বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, কারখানাটি ৩০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। ১১০ একর জমিতে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারখানাটির দৈনিক সার উৎপাদন হবে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
[৫] সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার কার্যক্রম শুরু হলে সার আমদানির ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এর ফলে দেশের মোট বার্ষিক ২৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় কারখানাগুলো একসঙ্গে ১৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদন করবে। দেশের কারখানাগুলো বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ টন উৎপাদন করছে। বাকি চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।
[৬] জানা যায়, ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানা প্রকল্পের বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ও বাণিজ্যিক ঋণ ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা; ঋণদাতাদের মধ্যে রয়েছে জাইকা, এইচএসবিসি ও ব্যাংক অব টোকিও মিৎসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড।
হাতির চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ১২ করিডোর উন্মুক্ত রাখার নির্দেশনা
নিজস্ব প্রতিবেদক : [১] দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস এখন বাংলাদেশে, যেটির নিচে দিয়ে ট্রেন এবং ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে হাতি। গত বছরের শেষ দিকে চালু হওয়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে নির্মিত হয় এ এলিফ্যান্ট ওভারপাস। [২] হাতি পারাপারে চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতিতে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এ ওভারপাস চালু হয়েছে। এতে পাহাড়ের নিচে সুড়ঙ্গ দিয়ে চলছে ট্রেন আর উপরে পারাপার হচ্ছে হাতি।
[৩] গত বৃহস্পতিবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে হাতির ১২টি করিডোরের সন্ধান পায়। বাংলাদেশে হাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত ১২টি করিডোরের মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ৩টি, উত্তর বনবিভাগের ৫টি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের ৪টি রয়েছে। আইইউসিএন বাংলাদেশে যে ১২ হাতির চলাচলের পথ (করিডোর) চিহ্নিত করেছিল সরকার সেই ১২টি করিডোর নির্দিষ্ট করে গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। [৪] এতে আরও বলা হয়েছে, হাতির আবাসস্থল ও পরিবেশ টেকসই রাখতে, তাদের খাদ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি চলাচলের করিডোর উন্মুক্ত রাখার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। সাংবিধানিকভাবেও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। [৫] দেশে হাতির আবাসস্থল মূলত পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া; কক্সবাজার জেলার ফাঁসিয়াখালী, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ বন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের গারো পাহাড়ে।
[৬] বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, অর্থাৎ বৃহত্তর চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গমাটি ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলগুলোতে স্থায়ী হাতির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। অভিবাসী হাতিগুলো বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভারত বা মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে আসে। এগুলোর বিচরণক্ষেত্র সিলেট ও মৌলভীবাজার, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায়। এছাড়া রাঙ্গামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের কাসালং বন ও বান্দরবানের সাঙ্গুতেও রয়েছে এসব হাতির বিচরণ।
[৭] সরকার স্বীকৃত ১২টি করিডোরসহ অপরাপর করিডোরগুলোতে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ বন্যপ্রাণীর বিলুপ্তি রোধকল্পে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে এসব করিডোর অবৈধ দখলদার মুক্ত করতে হবে। বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী হাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি করিডোরগুলো রক্ষা করার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে।