ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন সন্দেহের জেরে আশরাফুল ও আশাদুল নামের ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা
সনতচক্রবর্ত্তী : [১] ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর মন্দিরে আগুনে পুড়ে যায়। এই ঘটনায় সন্দেহের জেরে আশরাফুল ও আশাদুল নামের ২ ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭ জন।
[২] বৃহস্পতিবার রাতে মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে এ ঘটনা ঘটে। [৩] আহতদের উদ্ধার করে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। [৪] নিহতরা হলেন- উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল খান (১৭) ও তার ভাই আশাদুল খান (১৫)। [৫] ঘটনাস্থলে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় দেখা যায়, পঞ্চপল্লী কালীমন্দিরে একটি প্রতিমা আগুনে পুড়ে গেছে। এর পাশে একটি নছিমন গাড়িতে আগুন জ্বলছে। তার পাশেই অবস্থিত পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের টয়লেট নির্মাণকাজের জন্য এর একটি কক্ষে নির্মাণ শ্রমিকেরা থাকতেন। মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগে সাত শ্রমিককে মারধর করা হয় বলে জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে।
[৬] জানা গেছে, পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেওয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন স্কুলের নির্মাণ শ্রমিকরা আগুন দিয়েছেন। তারা এই শ্রমিকদের বেদম পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। এদের মধ্যে দু’জন নিহত হয়েছেন। পঞ্চপল্লী এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত। কে বা কারা আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
[৭] ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দুঅধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। এর মধ্যে নির্মাণ শ্রমিক আপন দুই ভাই গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
[৮] পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, মন্দিরে আগুনের ঘটনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন উত্তেজিত হয়ে সেখানে জড়ো হয়। আগুন দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের অভিযুক্ত করে তারা স্কুলে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
[৯] জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘটনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে অতিরিক্ত দেড়শ পুলিশ ঘটনাস্থলে সংযুক্ত করা হয়েছে।
[১০] তিনি বলেন, গণপিটুনিতে দুইজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সেখানে চরম উত্তেজনা থাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ, এবিবিএন, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন।