টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণে অগ্রাধিকার দিন
ড. প্রণব কুমার পান্ডে
গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার তাৎপর্য অতিরঞ্জন করা যাবে না। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সুশীল সমাজের সংগঠনগুলো একটি সমৃদ্ধ গণতন্ত্রের অপরিহার্য স্তম্ভ। একটি কার্যকর বিচার বিভাগ আইনের আধিপত্যের নিশ্চয়তা দেয়, মৌলিক অধিকার রক্ষা করে ও পক্ষপাত ছাড়াই বিরোধ নিষ্পত্তির ন্যায্য উপায় প্রদান করে। একটি স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা গণতান্ত্রিক শাসনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। শান্তি প্রয়োগকারী সংস্থা শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখে, নাগরিকদের অধিকার রক্ষা করে ও সমাজে দায়িত্ব প্রচার করে। সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলো ব্যক্তিদের স্বার্থকে চাম্পিয়ন করার জন্য, উন্মুক্ততাকে উৎসাহিত করতে ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দায়ী করা নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করে, নাগরিকদের সম্পৃক্ততা উন্নত করে ও গণতান্ত্রিক নীতিগুলোকে রক্ষা করে, অবশেষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সহনশীলতায় সহায়তা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বের কারণে বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন অর্জন করেছে। তা সত্ত্বেও, এটি স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই অর্জনগুলো সত্ত্বেও, দেশে এখনও প্রয়োজনীয় সরকারি সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে অসুবিধা রয়েছে, যা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি নির্বাচন কমিশন। কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নে সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিরোধী দল ও এর সহযোগীদের সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। যদিও গঠনমূলক সমালোচনা কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভিত্তিহীন হামলা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়। সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই ফলপ্রসূ বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করতে হবে কোনো ঘাটতি পূরণ করতে ও নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও সুষ্ঠুতা উন্নত করতে।
এছাড়াও, নিরপেক্ষ ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে কমিশনের স্বাধীনতা, সক্ষমতা জোরদার করার জন্য আরও পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সরকারের আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অধিকন্তু, যদিও বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবুও শাসনের সূচকগুলো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। যদিও সরকার সামাজিক সূচকে অন্যান্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছে, তবে এতে আত্মতুষ্ট হওয়া উচিত নয়। সামগ্রিক শাসনব্যবস্থার উন্নতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা জোরদার করা জড়িত। যদিও এই বিষয়ে পরিবর্তনগুলো শুরু করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, তবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়। সরকারের উচিত এই পরিবর্তনগুলোর সফল বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য তার প্রচেষ্টা জোরদার করা, যার ফলে শাসনে বর্ধিত জবাবদিহিতা ও উন্মুক্ততা প্রচার করা।
নির্বাচন ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়াও, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায়বিচার ও আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য সম্পদ বরাদ্দকে অন্তর্ভুক্ত করে। আইনের আধিপত্য বজায় রাখতে ও প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ন্যায়সঙ্গত আচরণের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য একটি কার্যকর ও স্বায়ত্তশাসিত বিচার বিভাগ অপরিহার্য। একইভাবে, একটি সুসজ্জিত, স্বচ্ছ আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও নাগরিকদের অধিকার রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিকন্তু, মানব পুঁজির চাষ, আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রচারের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা অপরিহার্য। প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ একটি চিরস্থায়ী উদ্যোগ যা অটল প্রতিশ্রুতি ও ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি রাখে। সরকারকে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের উপর জোর দিতে হবে যা সুশাসনকে উৎসাহিত করা, জবাবদিহিতা জোরদার করা ও আইনের শাসন বজায় রাখার উপর জোর দেয়।
যদিও সরকারি উদ্যোগ অপরিহার্য, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্বশীল রাখা হয় ও সংস্কারের জন্য লবিং করা হয়। সুতরাং, নাগরিকদের সম্পৃক্ততার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা ও স্বাধীনভাবে নিজেকে প্রকাশ করার অধিকারের পক্ষে সমর্থন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উদ্যোগের গুরুত্বপূর্ণ দিক। পরিশেষে, যদিও বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে সাসটেইনেবল উন্নয়ন অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করার জন্য দৃঢ় নিষ্ঠার প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশকে অবশ্যই তার গণতান্ত্রিক অর্জনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, আরও সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে পথ দেখাতে হবে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ যে প্রগতি ও গণতন্ত্রের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে রয়ে গেছে তার নিশ্চয়তা দিয়ে এই যৌথ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য জড়িত সকল পক্ষের সহযোগিতা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক। অনুবাদ : জান্নাতুল ফেরদৌস। সূত্র : ডেইলি সান