ভারতীয় পণ্য বর্জন : বিএনপি নেতারা এসব কী বলেন!
মাসুদ কামাল
ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে নানা ধরনের তৎপরতা নানা রকম কর্মকাণ্ড আমাদের চোখে পড়েছে। আমরা নিজেরাও দেখছি এটা কতোটুকু কার্যকর হচ্ছে আর কতোটুকু হচ্ছে না। শুরুর দিকে ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে যতোটা উন্মাদনা ছিলো, মানুষের মাঝে একপ্রকার উৎসাহ উদ্দীপনা ছিলো সেটা কিছুটা কমে এসেছেÑ এ রকম প্রশ্ন কিন্তু অনেককেই করতে শুনেছি। তবে কাজ যে কিছু হচ্ছে না তা বলা যাবে না। বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী এই সামাজিক আন্দোলনকে রাজপথে চাদর পুড়িয়ে সমর্থন জানানোর পর নতুন গতি পেয়েছিলো। কিন্তু তাঁর সমর্থন জানানোর পর বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে এ বিষয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করতে আমি শুনিনি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একদিন এ বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তাও আবোলতাবোল হিসেব দিয়েছিলেন ভিসার খরচ নিয়ে গুণ ভাগের হিসেবে গড়মিল করে ভুল বলছিলেন।
ঈদের পরের দিন চট্টগ্রাম মেহেদীবাগ নিজ বাসায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসেছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি ভারতীয় পণ্যবর্জন সর্ম্পকে বলেছেন যে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। এ আন্দোলনে কোনো কোনো নেতা সম্পৃক্ত। আমি উনার বক্তব্যের রাজনৈতিক কর্মসূচী নয় ও সামাজিক আন্দোলন কথাটির সঙ্গে একমত কিন্তু আন্দোলনে কোনো কোনো নেতা সম্পৃক্ত এ কথার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। উনি কথাটা এভাবে না বলে বলতে পারতেন যে তিনি সম্পৃক্ত নন। আর একটা সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হবার কী আছে আমীর খসরু মাহমুদ কী সমাজের বাইরের কেউ? যে আন্দোলন সমাজ থেকে শুরু হয় সেটাকে অস্বীকার করা যায় না। যখন তিনি বললেন কোনো কোনো নেতা সম্পৃক্ত তার মানে অধিকাংশ নেতারাই সম্পৃক্ত নয়।
অনেকেইে বলে থাকে যে, বিএনপির একজন থানা পর্যায়ের নেতা তার নিজ এলাকায় ঠিকমতো থাকতে পারে না তাহলে ব্যবসা করবে কীভাবে? অথচ আমীর খসরু মাহমুদের ব্যবসায় এখনো পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি ক্ষতি হয়নি এমনকি তিনি অনেক বড় মাপের ব্যবসায়ী। এভাবেই এ দেশের রাজনীতি চলে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি আগেও বলেছি যে, ভারতীয় পণ্য বর্জন করে ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা যাবে না। কারণ ভারত আমাদের দেশে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে তা পুরো অর্থনৈতিক হিসেবে মাত্র ২ দশমিক ৯৬ এর কাছাকাছি। কিন্তু আমি এও বলেছিলাম যে, মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ আন্দোলনের করে ব্রিটিশদের অর্থনীতি খসাতে পারেনি, কিছুই করতে পারেনি। তবে স্বাধীনতাকামী জনগণের মাঝে পুরো দেশে একটা জাগরণ তৈরি হয়েছিলো, যা এক রকম প্রতীকী আন্দোলন।
ভারতীয়রা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের আকাক্সক্ষা নিয়ে খেলা করছে। যা বিগত নির্বাচনের সময় একতরফা একটা নির্দিষ্ট দলকে সাপোর্ট দিচ্ছে এ বিষয়টা প্রমাণের জন্য এ দেশের নাগরিক যদি ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে নামে তাহলে এ আন্দোলন একটা প্রতীকি আন্দোলন হয়ে উঠতে পারে। এ আন্দোলনের দ্বারা ভারতীয় সরকার যেন বুঝতে পারে যে, বাংলাদেশের মানুষ কী চায় এবং এটা বুঝতে পেরেই কিন্তু সরকার এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে শক্তভাবে লেগেছিলো। তারা সরকার ভারতকে বোঝাতে চেয়েছিলো যে আমরা ভারতীয় সরকারের পক্ষে আছি। বিএনপি চায় ভারতকে কাছে টেনে নিতে? কিন্তু আমার মন বলছে এটা কোনোদিন হবে না তারা একতরফা প্রেম চালিয়েই যাবে।
বিএনপি ভারতকে প্রেম দিতেই থাকবে। কেননা বিএনপির নেতৃত্বে যারা আমীর খসরু মাহমুদের মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন তারাই এ কাজ করবেন। উনি কথাটা বলতে পারতেন, ভারতীয় পণ্য একটি সামাজিক আন্দোলন এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। উনাকে যদি প্রশ্ন করা হতো সমর্থন করা নিয়ে তাহলে তিনি বলতে পারতেন যে, ব্যক্তিগতভাবে আমিও সমর্থন করি কিন্তু তিনি তা পারবেন না সে সাহস নেই। আমীর খসরু মাহমুদ একতরফা প্রেমের ফর্মুলায় ডুবে আছেন। আমাকে একজন বলছিলো যে, বিএনপি অনেক বড় একটা দল ও দেশের অর্ধেক মানুষ তাদের সমর্থন করে এবং তাদের সরকারি দল হিসেবে দেখতে চায়। এমনকি বিএনপিও বিশ্বাস করে যে ৫ কোটি ভোটার তাদের সমর্থন করে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। সূত্র: কথা ফেসবুক পেজের ভিডিও কন্টেন্ট রাজনীতির কথা অনুষ্ঠান থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম