অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত ভালো, তবুও কেন শেয়ারবাজারে মন্দাবস্থা
মিনহাজ মান্ন্নান ইমন
শেয়ারবাজারের ভালো-মন্দ অনেকটা নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের মনোভাবের ওপর। বিনিয়োগকারীরা কেবল অর্থনৈতিক বিষয়কে গুরুত্ব দেন না, এর সঙ্গে রাজনৈতিক, ভূতাত্ত্বিক বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ও জড়িত। আপনারা প্রায়ই খেয়াল করবেন বিনিয়োগকারীদের মনে প্রভাব পরে খুব সহজেই। আমরা যখন আশেপাশের কোনো দেশে যুদ্ধাহত পরিস্থিতি দেখি তখন সরাসারি সেটা শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মনে আক্রমণ করে। ঈদের আগেও আমরা শেয়ারবাজারের দুর্বল চিত্র দেখেছি। এর মধ্যেও বিনিয়োগকরীরা নতুন করে আশায় ছিলেন যে, ঈদের পর শেয়ারবাজারে ভালো হাওয়া বইবে, কিন্তু তা হলো না। আসলে আমাদের সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়, এমনকি বৈশ্বিক পরিস্থিতির জন্যও। সংবাদে দেখলাম বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাহত পরিস্থিতিতে তিনি অস্বস্তিবোধ করছেন। তাহলে একজন মন্ত্রীর বক্তব্যে যদি অস্বস্তিবোধ থাকে সেখানে তো বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি অস্বস্তিতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে শেয়ারবাজার যতোটুকু পরার কথা তার চেয়ে বেশি প্যানিকড হয়। কারণ আমাদের সাপোর্ট লেভেল একেবারেই নেই। মূলকথা হলো, বিনিয়োগকারীর হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা না থাকার কারণে শেয়ারবাজার পতনের কবলে আছে, এটাই বাস্তবতা।
শেয়ারবাজার সূচককে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার সমাধান চাইলেই পাওয়া যাবে না। কারণ এটি লম্বা বিষয়। প্রথমত আমরা আগেই বলেছি যে, কমিশনারদের সরকার নতুন করে পুনঃনিয়োগ দিয়েছেন এবং বাকি কমিশনারদের বিষয়টি খুব দ্রুতই সমাধান হবে। ফলে বিনিয়োগকরীরা আশায় বুক বাঁধলেন পুনঃগঠিত নতুন কমিশন হবে। সঙ্গত কারণে যারা নতুন আসেন তারা শেয়ারবাজারকে সুন্দর করে সাজাতে চান ও বাজার নিয়ে নানান রকমের প্রত্যাশার কথা বলে থাকেন। এটি একটি ভালো দিক। পাশাপাশি বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে যে নেতিবাচক দিকগুলো ছিলো তা একেবারেই নেই। আগে প্রবল রেমিটেন্স ছিলো না, এমনকি রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম স্বাভাবিক ছিলো। অনেক বিনিয়োগকারী ভেবেছিলেন ঈদের পরে শেয়ারবাজারের সূচক ইতিবাচক হবে, কিন্তু তা হয়নি। অন্যদিকে বৈশ্বিক যুদ্ধের আতঙ্কের ফলে অনেক বিনিয়োগকারীই পিছিয়ে আছেন। বিনিয়োগকরীদের সর্তক করার বিষয়ে বলতে চাই যে, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের দেশের শেয়ারবাজার সূচক নিম্নমুখী এর সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই, এটা সম্পূর্ণ মনস্তাত্বিক বিষয়। এছাড়াও শেয়ারবাজারের অভ্যন্তরীণ দিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইসিবিকে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। মূলত আইসিবির জন্ম হয়েছে শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাখতে এবং ভালো সময়ে তারা শেয়ার বিক্রি করবে ও খারাপ সময়ে শেয়ার কিনবে এর জন্যই। বৈশ্বিক যুদ্ধের পরিস্থিতির জন্যেও বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে প্যানিকড হবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আইসিবি তৈরি করা হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগকারী কয় টাকার শেয়ার কিনেছেন, সেখানেও আইসিবির বড় কোনো ভূমিকা নেই। দীর্ঘমেয়াদি মন্দা বাজার থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আর থাকবেন না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। যারা স্টেকহোল্ডার তাদের অফিস চালানো কষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভালো নয়। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি ভালো, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। সকল সূচক ঊর্ধ্বগতি। কেবল আস্থা ফেরত আনতে পারছি না। বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধ হলে আমার শেয়ার নিয়ে ভয় পাবার কারণ ছিলো। কিন্তু ইরান-ইজরায়েলের যুদ্ধের সঙ্গে আমাদের শেয়ার কমার কোনো কারণ নেই। ফলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্যানিকড হয়ে শেয়ার বিক্রি করলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতি হবে।
পরিচিতি: সাবেক পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।
সূত্র: একাত্তর টিভি ইউটিউব চ্যানেলের সংবাদ বিস্তার অনুষ্ঠানর থেকে শ্রুতিলিখন করেছে রুদ্রাক্ষী আকরাম।