চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও উল্টো চিত্র দেশের বাজারে
সোহেল রহমান : [১] দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে । অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন সময়ে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হলেও বেসরকারি পর্যায়ে কাঙ্খিত সাড়া পাওয়া যায় না। অথচ গত চার বছর ধরে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দর ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারে এর কোন প্রতিফলন দেখা যায় না।
[২] রোববার অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি’র বৈঠক উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
[৩] খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টন ও বোরো মৌসুমে ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টন)।
[৪] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসাব মতে, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ১ হাজার টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার টন ও বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার টন)।
[৫] এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার টন ও বোরো মৌসুমে ২ কোটি ২২ লাখ ৬৬ হাজার টন)। এর বিপরীতে আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার টন এবং আমন মৌসুমে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদিত হচ্ছে না।
[৬] খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গত ৭ ফ্রেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দিয়ে শুধুমাত্র ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক নির্ধারণ করে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে কোন চাল আমদানি হয়নি। তবে আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বেসরকারি ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত মোট চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৬৭ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল রয়েছে।
[৭] খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে (মার্চ ২০২০-মার্চ ২০২৪) অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রায় ১৮ টাকা বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে ২০২০ সালের মার্চে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল সর্বনিম্ন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের সর্বনিম্ন দর ছিল ২০২২ সালের মার্চে, এটি ছিল ২০২০ সালের চেয়েও কম। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে তখন প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ২০২০ সালের চেয়েও প্রায় ১২ টাকা বেশি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমলেও ওই সময়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে।
[৮] খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২০ সালের মার্চে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সিদ্ধ চালের এফওবি দর ছিল ৪৭৯ ডলার (থাইল্যান্ড) ও ৩৬৪ ডলার (ভারত) এবং থাইল্যান্ডের আতপ ৪৭৫ ডলার।
[৯] পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দর অনেকটা কমে যায়। ওই সময় প্রতি টন সিদ্ধ চালের এফওবি দর ছিল ৩৯৯ ডলার (থাইল্যান্ড) ও ৩৬৪ ডলার (ভারত) এবং থাইল্যান্ডের আতপ ৪০০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এ সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৪৩ টাকা ২৪ পয়সা। অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি।