যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে বাংলাদেশের শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে
সোহেল রহমান : [১] যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা ও উন্নয়ন অর্থায়ন করপোরেশন (ডিএফসি) ফান্ডের সহায়তা পেতে হলে বাংলাদেশের শ্রম আইন আরো উন্নত করতে হবে।
[২] রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বি-পাক্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) কাউন্সিল-এর বৈঠকে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে ঢাকা সফররত ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর প্রতিনিধিদল
[৩] বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়ে বলেন, আমরা আমেরিকার বাজারে সব সময় শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা দাবি করে আসছি। কারণ, বাংলাদেশের রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকা। এর মধ্যে গার্মেন্টেস পণ্যের বাইরে অন্যান্য পণ্যগুলো যাতে রপ্তানি করতে পারি, রপ্তানি বহুমুখীকরণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেমন, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিকস, ঔষধ ইত্যাদি।
[৪] তিনি বলেন, এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন অর্থায়ন কর্পোরেশন (ডিএফসি) বলে একটা বড় তহবিল আছে। সেখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়ণ কাজের জন্য সহযোগিতা পাওয়া যায়। সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
[৫] বাণিজ্য সচিব বলেন, কিন্তু যখন আমরা শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত সুবিধা চাই, ডিএফপি তহবিলের অংশীদারিত্ব চাই, তখন তাদের দিক থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রম অধিকার আরও উন্নত করতে হবে। আমাদের কিছু আইনের উন্নয়ন হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন আরো ভালো করতে হবে।
[৬] শ্রম আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যে আইনটা করতে যাচ্ছি, সেখানে আরও কয়েকটি বিষয় পুনর্গঠন করতে চাচ্ছি। এখন আইনে আছে, অন্তত ২০ ভাগ শ্রমিকের সম্মতিতে একটি ট্রেড ইউনিয়ন হতে পারে। তারা সেটাকে আরও কমাতে বলেছেন। শ্রমে আইনে অপরাধ করলে মালিকদের বিরুদ্ধে যে শাস্তির বিধান বা জরিমানা আছে, সেটাকে আরও বাড়াতে হবে এবং কোনো ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর তাদের সদস্য সংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে হলেও তা বাতিল করা যাবে না। এরকম ১১ দফার একটি দাবি তারা দিয়েছে।
[৭] শ্রমনীতির বিষয়ে কোনো ধরনের কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আজকে শুধু টিকফা প্লাটফর্মের অধিনে যে এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়, সেগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
[৮] শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল বক্তব্যটা কিÑ জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র বাদে সব দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। আমরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর আইন অনুযায়ী আমাদের সুবিধা দেয়ার কথা বলেছি। আরো বলেছি যে, সকল স্বল্পোন্নত দেশের যে জনসংখ্যা এর ১৮ ভাগ বাংলাদেশে বাস করে। সে হিসেবেও সুবিধাটা আমেরিকার দেয়া উচিত।
[৯] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। এ খাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা বেশি কাজ করেন। তারা গরিব পরিবার থেকে এসে এখানে কাজ করেন। কাজেই দারিদ্র্য দূরীকরণের একটা বিষয় আছে। তাদের আয় বাড়বে। একটি আইনে আফ্রিকার দেশগুলোকে তারা শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। আমরা বলেছি, আফ্রিকার গরিব আর এশীয় গরিবদের মধ্যে কেনো বৈষম্য হবেÑ এটা যুক্তিযুক্ত না।
[১০] বাণিজ্য সচিব বলেন, তৈরি পোশাক খাতের সূতা আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে থাকি। অন্তত: শেষ পর্যন্ত আমরা দাবি করেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের সূতা থেকে যে পোশাক তৈরি হবে, সে অংশের ওপর যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশ হতে এখনো কয়েক বছর বাকি আছে আমাদের।
[১১] তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কেউ কাউকে দয়া করে না। আমাদের যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমরা কোনো অগ্রাধিকারমূলক সুবিধাও পাই না, যে বলা চলে আমরা কারও দয়ায় রফতানি করছি। কাজেই সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলকভিত্তিতে কঠোর পরিশ্রম করে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমরা পণ্য রপ্তানি করছি।
[১২] বাণিজ্য সচিব বলেন, অন্যান্যের বিষয়ের মধ্যে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে ডব্লিউটিও’র আইন অনুযায়ী উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে। কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবে সে বিষয়টি আমরা মনে করে দিয়েছি। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ থেকে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। সেখানে তারা বিভিন্ন সময়ে মতামত দিয়েছে। সে বিষয়ে তারা সন্তুষ্ট। তবে এই আইনসহ অন্য যে সব আইন, যেমন কপিরাইট, প্যাটেন্ট আইন এসব আইনের বাংলা তারা পায়। সেজন্য তারা আইন প্রণয়নের সময় তারা ইংরেজি সংস্করণ করতে বলেছে।
[১৩] তিনি বলেন, এছাড়া কৃষিখাত নিয়ে একটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা হলো আমাদের পণ্য রপ্তানি করতে গেলে যে সার্টিফিকেশন লাগে, সে বিষয়ে তারা আরো সহযোগিতা করতে চায়।