
চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে জুলাইয়ে
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : [১] চীন সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। প্রায় ১৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে থাকবে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। [২] নগরের চট্টেশ্বরী সড়কে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্রধান ছাত্রাবাসের উত্তর পাশের (গোয়াছি বাগান নামে পরিচিত) প্রস্তাবিত স্থানে নির্মাণ হবে এ বার্ন ইউনিট। এতে থাকবে একটি বহিঃর্বিভাগ, একটি আন্তঃবিভাগ, একটি জরুরি বিভাগ, ১০টি আইসিইউ বেড, পুরুষদের জন্য ১০টি এইচডিইউ বেড, নারীদের জন্য ১০টি এইচডিইউ বেড এবং শিশুদের জন্য পাঁচটি এইচডিইউ বেড।এ ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র চীন সরকার অনুদান সহায়তা হিসেবে দেবে।
[৩] চমেক হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল এলাকায় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সম্ভাব্য জমি পরিদর্শনে আসেন চীন সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। ওই সময় চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জমি নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশস্থ চীনা দূতাবাস বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট করার আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রায় চার হাজার বর্গফুট জমিতে চারতলা বিশিষ্ট বিশেষায়িত ইউনিটটি নির্মাণের নকশাও তৈরি করা হয়। কিন্তু নির্ধারিত স্থানে প্রয়োজনের তুলনায় কম জমি থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হয়। [৪] জটিলতা নিরসনে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ চীনা প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুরাহা না হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন চীনের প্রতিনিধিরা। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও একাধিকবার আলোচনা করে প্রকল্পের নকশা পরিবর্তনের বিষয়ে চীন কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে পারেনি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ বার্ন হাসপাতাল’ নির্মাণের বিষয়ে আবারও প্রস্তাব দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত। এর ভিত্তিতে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য চারটি স্থানের প্রস্তাবনা দেয়। [৫] ২০২২ সালে জুনে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বার্ন ইউনিট নির্মাণের বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয়। ওই বছরের ১১ জুন চীনা প্রতিনিধি দলের দুই প্রকৌশলী প্রস্তাবিত জমি পরিদর্শন করেন। [৬] চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি ২৬ শয্যার। চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগের ৯টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষ নির্ভর করেন এই বার্ন ইউনিটের উপর। চমেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। ২৬ শয্যার ইউনিটে প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে যায়। সরকারিভাবে ২৬ জনের সেবা দেওয়ার জন্য যে জনবল দরকার তাও নাই আমাদের। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের যথেষ্ট সাপোর্ট দেয়। আমরা যখন যা চাই তখন তাই দেন।
[৭] চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, চীন ১৮১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে এ প্রকল্পে। আশা করছি, আগামী জুলাইয়ে কাজ শুরু করতে পারবো। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ২৪ মাস লাগবে শেষ হতে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে এ বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটটিতে। হাসপাতালের সব যন্ত্রপাতি দিবে চীন সরকার। আমরা শুধু হাসপাতালে যাতায়াতের রাস্তা ও নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ করবো।
[৮] তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে চীনের অর্থমন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিলেন। তারা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত জায়গা প্রস্তুত আছে কিনা তা দেখে গেছেন। সে অনুযায়ী নকশাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
