ফেসবুক যেন সমাজেরই দর্পণ!
আহসান হাবিব : [১] ফেসবুক সমাজেরই দর্পণ। এখান থেকেই বুঝে নেওয়া সম্ভব তার চিন্তারাজ্যটি ঠিক কেমন। এখানে আপনি যত স্থূল আবেগের প্রকাশ করবেন, ততো আপনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। এর মধ্যে একটা বিষয় হচ্ছে নৈতিকতা। ভালো-মন্দ, ঠিক-বেঠিক, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি নিয়ে আপনি যতো ভালো, ন্যায়, ঠিক, উচিতের পক্ষে লিখবেন, আপনি জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। [২] এখানে ধর্মের বিক্রি অন্য যেকোনো পণ্যের চেয়ে বেশি। কারণ এটি সবচেয়ে সুলভ্য, সস্তা। যা সস্তা, তার মূল্য এখানে সবচেয়ে বেশি। এর উপরে তাদের কেনার সামর্থ্য হয়নি। [৩] এখানে বিজ্ঞান সবচেয়ে অবহেলিত পণ্য। এটার কোনো বিক্রিবাট্টা নেই, বরং সব জায়গা থেকে বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেয় করে দেওয়ার জন্য এরা লড়াই করে। বিজ্ঞান নয়, এখানে কুসংস্কার, অতিপ্রাকৃত শক্তি, পরকাল, হুরপরী, নরক, বেহেশত খুব লোভনীয় পণ্য। এদের বিক্রিবাট্টা সবচেয়ে বেশি। এরা এখানে বুঁদ হয়ে থাকে।
[৪] এখানে প্রশ্ন হারাম। এখানে মেনে নেওয়াই নিয়ম। প্রশ্ন করলেই তাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া হয়। কলুর বলদের মূল্য এখানে সবচেয়ে বেশি। [৫] এখানে কোন বিষয়ে চিন্তা উদ্রেক করবে এমন লেখা কল্কে পায় না। এখনো কেউ যদি বলে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে, মিলিয়ন মিলিয়ন লাইক পাবে, কিন্তু কেউ যদি বলে মানবপ্রজাতির পূর্বপুরুষ… নামের একটি বানরসদৃশ প্রাণী, তাকে এমনকি হত্যা করাও হতে পারে। পরীক্ষা নয়, এখানে ঘোষণাই সত্য।
[৬] এখানে রহস্যের খুব দাম, রহস্যভেদ নয়। এরা রহস্য বলতে বোঝে ঈশ্বরের কারসাজি, একে বোঝা মনুষ্যকর্ম নয়। বৃক্ষে কীভাবে সালোকসংশ্লেষণ হয়, তা বুঝতে বিজ্ঞান নয়, একটি কথায় যথেষ্টÑ আল্লাহর নিয়ামত বা কুদরত। এসব কে দিয়েছে? এর উত্তর একটাই- ঈশ্বর। যা কিছু সব এভাবেই নির্মিত। মানুষ এসব শুধু ভোগ করবে আর এবাদত করবে ঈশ্বরের, ব্যস, আর কোনো কাজ নেই। [৭] আমাদের এই সমাজটি আগাগোড়া আদিম প্রবৃত্তি দ্বারা চালিত এক বর্বর প্রাণিবিশেষ। একই বিষয়ে জাবরকাটা ছাড়া এদের সারাদিন আর কোনো কাজ নেই। চিন্তাকে উদ্রেক করবে এমন বিষয় এখানে ঘৃণাকর। এদের বুদ্ধি মস্তিষ্কে নয়, জঙ্ঘায়। লেখক: ঔপন্যাসিক