আর্থিক খাতে ঝুঁকি কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
ডলার সংকট তৈরি হচ্ছে কয়েকটা কারণে সেগুলো হলোÑ ১. বিপুল পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে। ২. বিদেশি ঋণনির্ভর সরকারি মেগা প্রকল্প যার কয়েকটি স্বল্প মেয়াদি ঋণ এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ। সরকারের উপর ঋণ পরিশোধ করার চাপ বর্তমানে যতোটুকু আছে ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সবগুলোই ঋণ নির্ভর প্রকল্প। ঋণনির্ভর প্রকল্প অনিবার্য ছিলো না, এর বিকল্প ছিলো। কিন্তু সরকার ঋণ নিয়েছে, যা পরিশোধের জন্য চাপ অনেক বেশি। এছাড়াও অনেক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে ব্যয় বেশি হওয়ায় ঋণের চাপ ডলারে পরছে এবং ৩. আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে ডলার পাচার হচ্ছে। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে আগ্রহী নয়। বরং যারা অভিযোগকারী তাদেরই হেনস্থা হতে হচ্ছে। এর ফলে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে, সরকার ডলার পাচারকারীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ডলার সংকট দূর করা সম্ভব হবে না।
আর্থিক খাতে ঝুঁকি কমার কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। ডলার সংকট দূর করার জন্য সরকারের যেসকল উদ্যোগ নেওয়ার দরকার তার কোনো আলামত আমি দেখছি না। আর্থিক খাতের সংকট অর্থাৎ, ঋণ খেলাপির সংখ্যাবৃদ্ধি, ব্যাংক লোপাট ও দখল, ব্যাংক থেকে বড় মূলধণ নিয়ে পরিশোধ না করা তাদের বিরুদ্ধে সরকার ও আইনি কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এছাড়াও বড় ঋণ খেলাপিরা সরকারের অংশ, দুর্বল ব্যাংকের জন্য সেসব ব্যাংকের পরিচালকেরাই দায়ী কারণ তারা ব্যাংকের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। দেশের আর্থিক খাতের যদি এমন অবস্থা হতে থাকে এবং সরকার যদি ডলার সংকট দূর করার চেষ্টা না করে তাহলে আর্থিক ঝুঁকি কমার পরিবর্তে আরো বাড়বে। আর্থিক ঝুঁকি বাড়লে সরকারের কোনো অসুবিধা হবে না বরং মানুষের জীবনমান, আয়-ব্যয়, নিরাপত্তাহীনতা দিন দিন আরো বাড়বে ও দেশের আর্থিক ঝুঁকি বাড়বে।
শেয়ারবাজার নিম্নমুখী এর জন্য আমি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বিএসইসির পলিসিকে দায়ী করবো। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছিলো, এর সঙ্গে বড় প্রভাবশালী গোষ্ঠী জড়িত ছিলো। ফলে মামলার কোনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি কোনো বিচার-ব্যবস্থার সুরাহা হয়নি, তাই অনেকেই শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আইনি বিচার দুর্বল থাকার ফলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। আস্থার সংকট বেড়েছে, তাই শেয়ারসূচক সাময়িকভাবে ওঠে আবার নেমে যাচ্ছে। লেখক : অর্থনীতিবিদ। মুঠোফোনে মতামত গ্রহণ করেছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম