সরকারের সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল না থাকাই ভালো
ড. জাহিদ হোসেন
সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ কমছে। বিনিয়োগ কমে যাওয়ার বড় দুটো কারণ হলো, একদিকে মানুষের সঞ্চয় কমে যাওয়া অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কঠোর ও কড়া নিয়মকানুন আনা হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত কর আরোপ করার ফলে বিনিয়োগকারী কমে গেছে। মানুষের আয়ের থেকেও দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে, ডিপোজিট রেট বাড়ার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। তাছাড়া আমি শুনেছি সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করার ব্যাপারে আগের মতো তেমন আগ্রহী নয়। সঞ্চয়পত্রে উচ্চ করারোপ করা, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাদের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষ তারা নতুন করে আর বিনিয়োগ করেনি। আইনগত পদেেক্ষপ নেওয়ার ফলে অনেক বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
সরকারের বাজেটে বড় প্রভাব পরবে। রাজস্ব আয়ের এক চতুর্থাংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় হয় এবং এ সুদের ব্যয়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে সুদ সবচেয়ে বেশি। তাই সুদের ব্যয় বৃদ্ধি কমিয়ে আনার কৌশল হলো সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো। সঞ্চয়পত্রের যে সুদ দিতে হচ্ছে সেটার পরিমাণ কমে যাওয়া মানে সুদের ব্যয় কমবে। আইএমএফের শর্ত মতে, এ বছর সরকার অলরেডি এক চতুর্থাংশ মোট ঋণ গ্রহণ করেছে, সে তুলনায় সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণ অনেক কম। কাজেই সরকার ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্রকে সরকারের মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের এক চতুর্থাংশ রাখতে সফল হবেন। আইএমএফের পরামর্শ ছিলো সঞ্চয়পত্রের এক চতুর্থাংশের নিচে নিয়ে আসা আরেকটি শর্ত ছিলো সঞ্চয়পত্রের অর্থকে বাজেট থেকে আলাদা করা। সঞ্চয়পত্র সরকার বিক্রি করতে পারবে, কিন্তু বিক্রির সে টাকা বাজেটে অর্থায়ন করা যাবেনা।
সুদের হার, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ও বিল বন্ডের সুদের হারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ছিলো। বাজারে বিক্রি কম, সরকারের অনেক ধার, ব্যাংকে সুদের হার বেড়েছে। সব ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধি হয়েছে। সুতরাং সুদের দিক থেকে চিন্তা করলে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য বিকল্প যা আছে সেটার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তার মানে এই না যে আগামীতে থাকবে না। সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীলতার যৌক্তিকতা নিয়ে বলতে চাই যে, সরকার ঋণ করে খরচের অর্থায়ন বৃদ্ধি করছে। ব্যয় কমানোর জন্য সঞ্চয়পত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা জরুরি এবং বাজেটের সঙ্গে সঞ্চয়পত্র না রেখে আলাদাভাবে সমন্বয় করে চলা। তবে আমি সুপারিশ করবো, সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল না থাকাই ভালো।
পরিচিতি: অর্থনীতিবিদ। মুঠোফোনে মতামত নিয়েছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম।