সবল ব্যাংকের কাঁধে দুর্বল ব্যাংককে তুলে দিলে কী হবে?
অধ্যাপক এমএম আকাশ
বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে যে, তাদের নেতৃবৃন্দে সেখানকার কর্মীরা ব্যাংক একীভূতকরণ সম্পর্কে পড়াশোনা করেছে। কথা সত্যি। আমি নিজেও দেখেছি তাদের গাউডলাইন দিয়েছে, কিন্তু গোঁড়াতেই ভুল। কে কার সঙ্গে একীভূত হবে, কে কার সঙ্গে স্বচ্ছ হবে আর কে হবে হস্তান্তরের পরবর্তী মালিক? এ সকল বিষয়ে স্পষ্ট নয়। কেবল বলা হয়েছে, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটা ব্যাংকের একীভূত হতে পারে বা একটা সবল ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের একীভূত হতে পারে। আরও বলছে যে, একটা দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে অন্য দুর্বল ব্যাংকের একীভূতকরণ হতে পারে। এসকল বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো পরিষ্কার নয়। আমি বলবো যে, আগে নীতিগত ব্যাপারে পরিষ্কার করা হোক। কী কী যোগ্যতা, স্বার্থ থাকলে ব্যাংক একীভূত করার ক্ষেত্রে নিজেকে অন্য ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করবে এবং সে ব্যাংক তাকে গ্রহণ করতে পারবে এবং একীভূতকরণের পর যেসকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে তার যে অপব্যবহার হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?
খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের বিশাল ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সুদ অপরিশোধিত থাকে এমনকি ঋণ নিয়ে কীভাবে ব্যবহার করছে সেটাও স্পষ্ট না। সেটা কি চোরাকারবারিতে ব্যবহৃত নাকি মানি লন্ডারিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা স্পষ্ট না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ঋণের টাকা নিয়ে সে দিব্যি বড়লোক বনে যাচ্ছে, বাইরে টাকা পাচার করে বিনিয়োগ করছে। এমনকি বড় শহরে আন্তর্জাতিক জমি কিনছে বেগমপাড়া বানাচ্ছে এসব তো ঋণের অবৈধ ব্যবহার করছে। এসব অবৈধ ঋণ ব্যবহারকারীদের দুই ভাবে দমন করা যেতে পারে। যেমন, এদের চিহ্নিত করে শাস্তিযোগ্য কর আদায় করা, অথবা জবাবদিহিতা আদায় করা। অন্তত আর কিছু না হোক ঋণ খেলাপি, ঋণের অপব্যবহার করে অবৈধ কারবার করা ব্যক্তিদের একটা তালিকা তৈরি করে তা ফাঁস করা উচিত ছিলো। সরকার আর্থিক খাতে একীভূতকরণের আইন করে সবল ব্যাংকের কাঁধে দুর্বল ব্যাংককে তুলে দিবে তারপর সেখানে কী হবে তা অনিশ্চিত এমনকি বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছে। আমি এ বিষয়ে বলবো যে, স্বজনতোষণমূলক শেয়ারবাজারের অধীনে কোনো উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক অগ্রসর হতে পারে না। এর পূর্বশর্ত হচ্ছে স্বজনতোষণ ছেড়ে ধনী স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ঋণ আদায় করা।
বাংলাদেশের ডিরেক্ট করের হার প্রায় মাত্র এক তৃতীয়াংশের মতো, কিন্তু ইনডিরেক্ট করের হার দুই তৃতীয়াংশের বেশি। তাহলে বলা যায়, ডিরেক্ট করের হার গোপন করা হচ্ছে এবং এটাকে কীভাবে বাড়ানো যায় সম্পদ ও আয়কর ঠিক জায়গায় আড়ত করে ঠিক জায়গায় কীভাবে তোলা যায় তার একটা রাজনৈতিক অঙ্গীকারনামা এবং ধনীদের তোষণ করে না এমন একটা ব্যবস্থা দরকার, স্বচ্ছতা ও জববাদিহিতা থাকা চাই পলিসি বিভাগের ও রাজস্ব বিভাগের কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে। যদি কোনো কর্মচারীর বেতন ৩০ হাজার টাকা হয় তাহলে তার যদি ঢাকায় নিজের বাড়ি থাকে তবে সে কর্মচারী এটার জবাবদিহি দিতে বাধ্য হবে। এ প্রশ্নগুলো আমাদের করতে হবে না হলে আমরা ঠিকমতো কর আদায় করতে পারবো না। লেখক : অর্থনীতিবীদ। মুঠোফোনে মতামত নিয়েছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম