কৃষিপণ্য কেনাবেচা আধুনিকায়নে হচ্ছে স্মার্ট কৃষি মার্কেট
মো.আখতারুজ্জামান : [১] বাংলাদেশে একটি স্মার্ট কৃষিব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ কৃষিব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কৃষিপণ্য কেনাবেচা আধুনিকায়নের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
[২] কৃষিপণ্য কেনাবেচার জন্য একটি অত্যাধুনিক ওয়েবসাইট ও অ্যাপ স্মার্ট কৃষি মার্কেট বাস্তবায়ন করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার) প্রকল্প।
[৩] এর আগে ২০২১ সালে কৃষিপণ্যের কেনাবেচার ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ সদাই চালু করা হয়েছিল। তবে স্বল্প বাজেটে তৈরী ওই অ্যাপটির প্রচুর সীমাবদ্ধতা ছিল। সারা দেশ ও বিদেশের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে কৃষি বিপণনের মতো বিশাল কর্মযজ্ঞ সেই অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অ্যাপটি ছিল মনোলিথিক আর্কিটেকচার এ প্রস্তুতকৃত। যে কারণে অত্যাধুনিক স্মার্ট কৃষি বাজার ওয়েবসাইটটি তৈরীর প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
[৪] নতুন এ ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে ছয় কোটি কৃষক ও ভোক্তাকে একসঙ্গে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। যেখানে একজন কৃষক দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে তার পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করতে পারবেন। পণ্যের ছবি ভিডিও কিংবা প্রয়োজনীয় অন্যান্য ফুটেজ যুক্ত করতে পারবেন ক্রেতার জন্য। সেটা বিক্রি হলে ঘরে বসে পেয়ে যাবেন অনলাইন পেমেন্টও। প্রতিটি কৃষকের আলাদা আলাদা নিবন্ধন থাকবে ওয়েবসাইটে। [৫] জানা গেছে, এ অনলাইন প্লার্টফর্মে কৃষকরা কমিশনবিহীন বিক্রির সুযোগ পাবেন। মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি পেমেন্টের সুযোগ, মূল্য যাচাইয়ের সুযোগ ও অর্ডারকৃত পণ্যের ট্র্যাকিং সুবিধাও এতে রয়েছে। অধিদপ্তর কৃষক ও উদ্যোক্তাদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রদান করবে। কৃষিপণ্যের পরিবহন সুবিধাও এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
[৬] অন্যদিকে ক্রেতারা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য কিনতে পারবেন খুব সহজে। পাশাপাশি কৃষিযন্ত্রসহ অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট পণ্যের কেনাবেচা সম্ভব হবে এ নতুন অ্যাপে। ভোক্তারা যাতে না ঠকে, প্রতারণার শিকার না হয় এবং নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত পণ্য পান, তাতে অ্যাপটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
[৭] আগের সদাই অ্যাপটি অনলাইনভিত্তিক কৃষি বিপণন ব্যবস্থা উন্নয়ন কর্মসূচি শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছিল; যা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা ছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের। সে লক্ষ্যে গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সংস্থা নিয়ে গঠিত কারিগরি কমিটি সদাই প্লার্টফর্মটি যুগোপযোগী এবং জনবান্ধব নয় বলে মতামত দেন। পুরনো অ্যাপে ৫ কোটির বেশি ব্যবহারকারীকে যথাযথ সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে পার্টনার প্রকল্পের সহযোগিতায় আপগ্রেডেড ওয়েবসাইট ও অ্যাপ তৈরীর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
[৮] কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, স্মার্ট কৃষি বাজার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিপণন কর্মসূচীর ধারাবাহিকতার একটি অংশ। আগের সদাই অ্যাপটি দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রযুক্তিগতভাবে আপডেটেড নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সেখান থেকে ৬ কোটি কৃষক ও ভোক্তাকে সেবা দেওয়া যায়। নতুন প্ল্যাটফর্মে সদাইয়ের তথ্যসহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
[৯] কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্মার্ট কৃষি মার্কেট প্লাটফর্মটি তৈরী উন্নয়ন ও পরবর্তি আপগ্রেডেশনের লক্ষ্যে চলতি বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) ক্রয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দরপত্র প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব মূল্যায়নের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।