অসহনীয় গরমে দিনমজুর ও রোদে পুড়ে-ঘাম ঝরিয়ে ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ মানুষের পাশে দাঁড়ান
গোলাম মোর্তোজা
এই গরমে সরকার বা সরকারি যেসকল সংস্থা আছে কাউকেই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নিতে বা কোনো কিছু করতে দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিশেষ করে নগরের যে নিম্নবিত্ত মানুষ আছে তাদের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি ঢাকায় দুটো সিটি করপোরেশন থাকা সত্ত্বেও তাদেরও কোনো উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে কেবল মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের জন্য। গরমে কি করা উচিত, বাইরে গেলে সঙ্গে কী কী রাখা উচিত। বাংলাদেশের হিট অফিসার বলছেন, বাইরে গেলে পানির বোতল সঙ্গে রাখবেন, ছাতা, হাত পাখা বা ব্যাটারি চালিত ফ্যান রাখবেন। এসব কথাই মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের জন্য। কিন্তু সাধারণ মানুষের পাশে কেউ নেই। যেহেতু সাধারণ মানুষের পাশে সরকার বা সরকারি কোনো মানুষকে দেখা যাচ্ছে না, তবে দেখার সুযোগ ছিলো তাদের জন্য করার কিছু ছিলো। আমি অন্যান্য শহরের কথা বাদ দিলাম, ঢাকা এমন একটি শহর যে শহরে ঘরের বাইরে বের হলে মানুষ যে পানি খাবে এ শহরে তার কোনো সুব্যবস্থা নেই। এ গরমে সিটি করপোরেশন প্রতিটি রাস্তায় বিশুদ্ধ খাবারের পানির ব্যবস্থা করতে পারতো তাদের কোনো মনোযোগ নেই। তারা নির্বিকারভাবে বসে আছেন। সিটি করপোরেশন বা সরকার গরমে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করবে বা উদ্যোগ নেবে আমি সে প্রত্যাশা করছি না।
গরমের তীব্র তাপদাহে আমাদের সবার অবস্থা অস্বস্তিকর, তবুও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের মনে হয়েছে এ অবস্থাতেও আমার বা আপনার দেশের নাগরিক হিসেবে এ ক্ষেত্রে কিছু করণীয় আছে যেহেতু সরকার কিছু করছে না। যেমন, আমি কারওয়ান বাজারের দিনমজুরদের দিয়েই উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই যে, কারওয়ান বাজারে দিনমজুর আছে রাস্তায় যারা ঘুমিয়ে বা না ঘুমিয়ে দিন কাটে তাদের আশ্রয়ের জায়গা নেই তাদের রোদ, ঝড়-বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই। এ তীব্র গরমে তারা রোদের নীচেই আছে কোথায় বসে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা নেই। এমন মানুষের জন্য আপনাদের সাধ্যমতো বিশুদ্ধ খাবারের পানির ব্যবস্থা করতে পারেন, খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা আপনি দিনমজুরদের দিয়ে ২০ টাকার কাজ করালে তাকে আপনার সাধ্যমতে চল্লিশ টাকা বা তার বেশি দিতে পারেন। কারণ এ গরমের তাপদাহে অন্যান্য দিনের মতো দিনমজুররা বেশি কাজ করতে পারে না। আমি বা আপনারা যদি ২০ টাকা বাড়িয়ে দিই তাহলে তারা অনেকটা রেহাই পাবে এবং খেতেও পারবে। রিকশাচালকদের আয় আগের তুলনায় অর্ধেক নেমে এসেছে। যারা আগে রিকশা চালিয়ে সাতশ থেকে আটশ টাকা আয় করতো, তাদের পক্ষে এ গরমে তা সম্ভব না। তারা এখন তিনশ থেকে চারশ টাকা আয় করছে তাদেরও আমরা সাধ্যঅনুযায়ী টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারি এর ফলে তারা অন্তত তাপদাহে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারবে।
সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পালন করছে, তাই আপনার এলাকাভিক্তিক বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করতে পারেন মানুষ যেন চলার পথেই তা পান করতে পারে। এছাড়াও যারা মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে এ গরমে রোদের তাপে তারা কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো ঝড়ের গতিতে আপনাকে আর গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে রোদের তাপ থেকে রেহাই পেতে একটা নির্দিষ্ট স্থানে বসে বিশ্রাম নিবে। তাদেরও আয় রোজগার কমে যাচ্ছে আমরা তাদেরও আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী টাকা বাড়িয়ে দিতে পারি। বিভিন্ন এটিএম বুথ, ব্যাংক, অফিসের ও বাড়ির দারোয়ানকে আমরা বকশিস দিতে পারি পানি খাওয়ার জন্য। সকালে থেকে যেসকল দিনমজুররা আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, টাউন হল ইত্যাদি এলাকার মোড়ে কাজের জন্য অপেক্ষা করে, এ গরমে তাদের পক্ষেও ঘাম ঝরানো, পরিশ্রম করা সম্ভব নয়। এ গরমে কাজের অভাব হয়ে যায়। তাদের আমরা সাহায্য করতে পারি। যারা নিম্নবিত্ত, বস্তির মানুষ, দিনমজুর, রোদে পুরে ঘাম ঝরিয়ে দিন এনে দিন খেটে খাওয়া মানুষ পাশে দাঁড়ানো দরকার। তারা এ তাপদাহে আগের মতো কাজ করতে পারছে না।
দায়িত্ব ছিলো সরকারের কিন্তু সরকার তা পালন করছে না। সরকারী কর্মকর্তা, মেয়রের হিট অফিসাররা যে পরার্মশ দিচ্ছেন কোনো ব্যক্তি যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তাকে গাছের আড়ালে বা শেডের নিচে নিয়ে যেতে হবে। এ শহরের কোথাও কী গাছ রেখেছেন? শেড কোথায় যে মানুষ অজ্ঞান হলে তাকে নিয়ে যাবে? বর্তমানে একটা রেওয়াজ হয়েছে গাছ লাগাতে হবে ভালো কথা কিন্তু গরমে কেন গাছ লাগানো হয় না। সিটি করপোরেশনের কাছে জানতে চাই গত ত্রিশ বছরে কতবার গাছ লাগানো হয়েছে, কতবার টেন্ডার করা হয়েছে, কত হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে সে গাছগুলো কোথায়? রোড ডিভাইডার তৈরি করবেন আর গাছ কাটবেন এভাবেই চলবে। গাছ লাগালেও তাদের লাভ টেন্ডার হবে, আবার গাছ কাটলেও লাভ টেন্ডার দিয়ে কাটাবেন। গত ত্রিশ বছরে এত গাছ লাগানো হলো সে গাছগুলো কোথায়? অর্থাৎ আমাদের এখানে ক্ষমতাবানরা সবকিছুতেই লাভ করছেন অথচ, সাধারণ মানুষের কোনো লাভ নেই, তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। কোনো ক্ষমতাবান তাদের পাশে নেই। সে কারনেই আমি বলছি আপনাদের সামর্থ্যানুযায়ী ব্যক্তি উদ্যোগে আপনার আশেপাশের নিম্নবিত্তদের সাহায্য করুন। এমন নয় যে আপনাকে এর জন্য টাকা সংগ্রহ করতে হবে আপনার হাতের কাছে যা থাকবে তা দিয়েই সাহায্য করুন।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক। গোলাম মোর্তোজা ফেসবুক পেজের ভিডিও কন্টেন্ট থেকে শ্রুতিলিখন করেছেন
রুদ্রাক্ষী আকরাম