রেল স্টাডিজ নামে একটা সাবজেক্ট হোক
নাজমুস সালেহী
দেশের কোন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রেল নিয়ে এক কলম পড়াশুনার ব্যবস্থা নাই। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায়, রেল ব্যবস্থাপনার সামান্য ব্যাপারেও পুরোপুরি বিদেশ নির্ভর বাংলাদেশ। ফলে প্রতিনিয়তই রচিত হচ্ছে পিছিয়ে পড়ার গল্প। এত সব ব্যার্থতাকে পেছনে ফেলে যে লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে, তাতে আগামী ৪১ সালের মধ্যেই এক শক্তিশালী রেল ব্যবস্থা পড়ে উঠবে এখানে।
সব লাইন ডাবল ও ডুয়েল গেজ হয়ে যাবে। চলে আসবে দেড় হাজারেরও বেশী ইঞ্জিন। যুক্ত হবে প্রায় দশ হাজার যাত্রীবাহী কোচ। দ্বীপ জেলাগুলো বাদে সব জেলাতেই পৌছে যাবে রেল লাইন। দক্ষিণাঞ্চলে হবে রেলওয়ে ইকোনমিক হাব। দেশের সকল বন্দর ও ইপিজেট কেন্দ্রিক আলাদা রেলওয়ে বাণিজ্যিক জোন করার পরিকল্পনাও আছে রেলের। ডিজেলচালিত ইঞ্জিন বাতিল হয়ে, পুরো রেল নেটওয়ার্ক হয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রিক পদ্ধতির। এই সময়ের মধ্যে বুলেট ট্রেনের আওতায় চলে আসবে বেশ কিছু রেল রুট। ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে বাংলাদেশ। ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, নেপাল থেকে ট্রেনে করে পণ্য আসবে বাংলাদেশে।
স্থাপিত হচ্ছে অত্যাধুনিক আইসিডি। কোচ তৈরির কারখানাও স্থাপিত হবে এখানে। নির্মান হবে ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ তৈরির আধুনিক কারখানা। বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার উদ্যোগ আছে কেন্দ্রীয় লোকমোটিভ কারখানা, সৈয়দপুর আর পাহাড়তলী কারখানাকেও। রেলকে একটা শিল্পে পরিনত করার বিশাল এক কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। গত এক যুগে এগিয়েছেও খানিকটা।
আগামী ২০/২৫ বছরের মধ্যে রেলের যে যুগান্তকারী সাফল্য রচিত হবে তা টেকসই করতে দরকার হবে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া জানা দক্ষ রেল অফিসার ও কর্মি। এজন্য এখন থেকেই রেলওয়ের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার দিকে নজর দেয়া জরুরি। সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে না হোক অন্তত বুয়েটে রেল স্টাডিজ নামে অনার্স মাস্টার্স এর একটা সাব্জেক্ট খোলা হোক। শুরুতেই পূর্ণাঙ্গ সাব্জেক্ট না হোক দু এক বছরের মধ্যে অন্তত ১০০ মার্কের একটা কোর্স দিয়ে যাত্রা শুরু হোক।
রেলের মহাউন্নয়ন যদি আর নাও হয়, তবুও প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা জরুরি। যতটুকুই যা আছে আমাদের তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আর পরিচর্যার অভাবেই প্রতি বছর লোকসান দিচ্ছে রেল। কারন সামান্য একটুতেই রেল এখন পুরোপুরি বিদেশ নির্ভর, ফলে খরচ বাড়ছে প্রতিদিন। বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় ৩৪টি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে রেলের এগুলো বাস্তবায়ন হলেই এক বিশাল রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে চলে আসবো আমরা। যদি নিজেরা এসব সংরক্ষণের সক্ষমতা অর্জন করতে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে না পারি, তাহলে লোকবলের অভাব আর বিদেশ নির্ভরতার কারনে ওই লোকসানের বোঝায়ই বইতে হবে রেলকে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই রেলওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নামে আলাদা বিশেষায়িত ভার্সিটিই আছে। এসব ভার্সিটিতে অন্তত ১৫/২০ টি সাব্জেক্ট আছে। প্রতিটি সাব্জেক্টই অনার্স মাস্টার্স লেভেলে ৫-৭ বছর ধরে পড়ানো হয়। এরপর আছে রেলের বিভিন্ন বিষয়ে এমফিল পিএইচডি’র সুযোগ। আমাদের এত কিছু না হোক
রেল স্টাডিজ নামে একটা সাব্জেক্ট হোক। আগামী শিক্ষা বছরে অন্তত ১০০ মার্কের একটা কোর্স দিয়ে শুরু হোক এই যাত্রা। যদি এও সম্ভব না হয় অন্তত কোন এক সাব্জেক্ট এর সঙ্গে অন্তত একটা কোর্স যুক্ত হোক। এখনই উদ্যোগ না নিলে বিপদ আছে সামনে। লেখক : রিপোর্টার সময় টিভি