বাজেট ২০২৪-২০২৫ ভর্তুকি কমাতে বাড়বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম
সোহেল রহমান : [১] আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভতুর্কির অঙ্ক ১ লাখ কোটি টাকার নীচে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে আবারও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন খাতে দেয়া ভতুর্কির পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকায় মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভতুর্কির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধিত বাজেটের এর পরিমাণ কমিয়ে ৯৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
[৩] অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ভর্তুকি কমিয়ে আনলেও আগামী অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে। এর পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে কৃষি খাত। এ খাতে ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)খাতে ভর্তুকি দেয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য খাতেও ভতুর্কি দেয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা।
[৪] সূত্র জানায়, এছাড়া রপ্তানি প্রণোদনায় ৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্স প্রণোদনায় ভতুর্কি বাবদ ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।
[৫] জানা যায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র বৈঠকে ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ভর্তুকির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। [৬] বৈঠকে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এ মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানোর সম্ভব নয় বলে সভায় বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। এ প্রেক্ষিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ও প্রণোদনা খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে ভর্তুকি রাশ টেনে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
[৭] সূত্র মতে, ফলে আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ ও এলএনজিসহ পেট্রোলিয়ামের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। ইতোমধ্যেই ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর কাজটি করা হচ্ছে।
[৮] বিদ্যুৎ খাতে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়ে সূত্র জানায়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের চাহিদার বিপরীতে ভর্তুকি অর্থ নিয়মিত পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ভর্তুকি অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে ছয় মাস পিছিয়ে আছে সরকার। তাই ‘ক্যারি-অভার’ বা বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
[৯] প্রসঙ্গত: প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে (২০১৭-২০১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগত সহায়তা ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এটি জিডিপি’র ১ দশমিক ৩ ভাগ। এর আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, এটি জিডিপি’র ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।