মুরগির দাম কিছুটা কমলেও গরুর মাংসের দাম কমছে না ঈদের পর আরও বেড়েছে আলু, আদা- রসুন লেবু ও অধিকাংশ সবজির দাম
মাসুদ মিয়া: [১] রাজধানীসহ সারাদেশে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের বাড়তি থাকায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। ঈদেও পর আরও বেড়েছে আলু আদা-রসুন লেবুও অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে। তবে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও গরুর মাংসের দাম কমছে না। এদিকে তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করছে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি হয়েছে দেশে। [২] চলতি এপ্রিল মাসের শুরু থেকে আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণে বিপাকে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমে বাজারে সবজি সরবরাহ কম। ফলে দাম আরও বেড়েছে।
[৩] সবজি বিক্রেতারা বলছেন, তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়েছে সবজি সরবরাহের ক্ষেত্রে। চাষিদের ক্ষেতে সবজি নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বারবার সেচ দেওয়ার কারণে সবজি উৎপাদনের খরচও বেড়েছে। যে কারণে গ্রামের মোকামে সবজির দাম বেশি। [৪] গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে। বাজারে আদা-রসুনের দামও বাড়তি। এছাড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দার দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, নতুন দামের সয়াবিন বাজারে আসা শুরু হয়েছে। এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারপ্রতি নতুন দাম ধরা হয়েছে ১৬৭ টাকা, যা আগের চেয়ে ৪ টাকা বেশি। সব সময় নাগালের মধ্যে থাকা পেঁপেও এখন ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা বছরের অধিকাংশ সময় ৩০ টাকার মধ্যে থাকে। এছাড়া ঈদের পরে কেজিপ্রতি আলুর দাম ১৫ টাকা বেড়ে মানভেদে ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা ঈদের আগে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে ছিল।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবজির মধ্যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটল ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সজনে, উস্তা, করলা ও ঝিঙের মতো সবজির দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[৫] এবিষয়ে কলতাবাজারের বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, সবজির সরবরাহ কম। গরমে সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দাম বেড়েছে।তিনি বলেন, গ্রামগঞ্জের মোকামগুলোতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় অধিকাংশ সবজির দাম ৮-১০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে। সেভাবে ঢাকার বাজারেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
[৫] এদিকে, গরমে বাজারে প্রতি হালি লেবুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা কয়েকদিন আগে লেবু হালি ছিল ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা এখন বেড়ে লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে। প্রচণ্ড গরমের কারণে লেবুর চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ঈদের পর দাম বেড়েছে অন্যান্য উপকরণেরও। বাজারে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৩০ থেকে ১৭০ টাকা। [৫] সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত বছরের এই সময়ে দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা রসুনের দামে অবশ্য গত এক সপ্তাহে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিদেশি রসুনের দাম এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি। তবে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে।
[৬] ঈদের আগে বেড়ে যাওয়া গরুর মাংসের দাম কমেনি। কেজিপ্রতি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজিতে।
তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য কমেছে। আড়াই’শ টাকার আশপাশ থেকে নেমে এসেছে কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়। তবে উল্টো চিত্র ডিমের বাজারে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
[৭] এবিষয়ে মতিঝিল বাজারের ক্রেতা সুমন্তা বলেন, সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা চিন্তা করে না, পণ্যটি আগে কম দামে কেনা। আর সরকার কোনো পণ্যের দাম কমালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম কমায় না। তখন তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখায়। আসলে বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। আর বিড়ম্বনায় পড়ে ভোক্তারা। দাম কমলেও ভোক্তাকে বেশি টাকা দিয়েই পণ্য কিনতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। [৮] এবিষয়ে বেসরকারী কোম্পানির এক কর্মকর্তা কামাল বলেন ‘সব কিছুর দাম বাড়তি। আমার বেতন ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আগে সারা মাসের খরচ শেষেও ৫- ১০ হাজার টাকা বেচে যেত। সেখান থেকে কিছু টাকা যেত সঞ্চয়ে, কিছু টাকা মা বাবাকে দিতাম। আর স্ত্রী নিয়ে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটায়। এখন আর পারি না। [৯] এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে [১০] দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা আগের সপ্তাহ বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা এখন ২০০ থেকে ২৩০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা, যা আগে ২০০-২৪০ টাকায় কেনা যেতো। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি করছেন ৬০০-১০০০ টাকায়। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা।