আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ হাজার কোটি টাকা
সোহেল রহমান : [১] বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। কিন্তু এটি এখনি পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। মূলত: সুদ ব্যয় কমানো এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের(আইএমএফ) শর্তে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এর ফলে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমিয়ে ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা রয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছওে (২০২৪-২০২৫) তা কমিয়ে ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রাক্কলন করা হয়েছে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ-এর ঋণের শর্ত পরিপালণে সরকারকে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। আগামী কয়েক বছরে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। [৩] এছাড়া সঞ্চয়পত্র খাতের ঋণ অনেক ব্যয়বহুল (সুদের হার ১২ শতাংশের বেশি) হওয়ায় গত কয়েকবছর ধরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনছে সরকার। এ খাতে সুদ ব্যয় কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার ওপর নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যেমনÑ এখন ৫ লাখ টাকার অধিক এ খাতে কেউ বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকে অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ণ দাখিল করতে হবে। এ জন্য অনেকে আর নতুন করে এ খাতে বিনিয়োগ করছে না।
[৪] অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গিয়ে ফেলছেন। এ অর্থ তারা সংসারের কাজে ব্যয় করছেন। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেকটা অর্ধেকে নেমে গেছে।
[৫] সূত্র মতে, এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট (প্রকৃত) বিক্রি নেতিবাচক হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির ঋণাত্মক পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিক্রির ঋণাত্মক পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা।
[৬] ঋণাত্নক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এখন আর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে না। ফলে এ খাতে সরকারকে নতুন ঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে না। তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের বিপরীতে সরকারকে এখনো বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। যেমন চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ হাজার ২০ কোটি টাকা।
[৭] বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০২৩ এপ্রিলে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমান ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি এপ্রিলে এই ঋণের পরিমান মাত্র ২১৪ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।
[৮] গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গ্রাহকদের মূল টাকা (বিনিয়োগ) ও মুনাফা (সুদ) বাবদ পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫২ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।
[৯] ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল। সে হিসাবে দেখা যায়, গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ খাত থেকে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ কম ঋণ নিয়েছিল সরকার।
[১০] ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
[১১] এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।