১০ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের সুবিধা বাতিল চায় আইএমএফ
সোহেল রহমান : [১] দশ বছর কর অবকাশ পাওয়া শিল্পখাতের কর মওকুফ সুবিধা বাতিল করে ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড় করার আগে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও আগের শর্ত পূরণ পর্যালোচনায় বর্তমানে ঢাকা সফরে রয়েছে আইএমএফ-এর একটি প্রতিনিধি দল। চলমান এ সফরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে কর অবকাশ প্রাপ্ত শিল্পখাত নিয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আইএমএফ-এর পরামর্শ হচ্ছেÑ ন্যূনতম ১০ বছর ধরে সুবিধা পাওয়া শিল্পখাতগুলোর অবকাশ সুবিধা বাতিল করে করের আওতায় আনা।
[৩] আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের আয়কর আইনে বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতে কর অবকাশ সুবিধা ২০২৫ সালের অর্থাৎ আগামী বছরের জুনে শেষ হয়ে যাবে। আইন অনুযায়ী, এই মেয়াদ শেষের পর তা যেন আর নবায়ন করা না হয়।
[৪] জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর হিসাবে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্পখাত বিবেচনা করলে দেশের অধিকাংশ খাতই করের আওতায় চলে আসে। এর মধ্যে রয়েছেÑ ফার্মাসিটিউক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণ সামগ্রীর স্বয়ংক্রিয় ইট কিংবা রড, রপ্তানি করে এমন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোল্ট্রি শিল্প, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ। এমন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প এর আওতায় চলে আসবে।
[৫] সূত্র মতে, আইএমএফ পরামর্শ দেয়ার অনেক আগে থেকেই এনবিআর এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে। তবে অবশ্যই আমাদের যেসব দেশীয় শিল্প ভালো করছে এবং যে সব পণ্যের জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, ওইসব খাতকে অবশ্যই আমাদের বিবেচনা করতে হবে। জটিল এমন সিদ্ধান্ত হুটহাট করে নেয়া সম্ভব হবে না।
[৬] জানা যায়, এর আগে গত মাসে আইএমএফ-এর একটি কারিগরি দল এনবিআর-এর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। সেখানে কর অবকাশ সুবিধা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের সফররত আইএমএফ-এর প্রতিনিধি দলটি এসব পরামর্শ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে।
[৭] আইএমএফ প্রসঙ্গে সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, সবাই কর অব্যাহতি বললেও আমরা সেটাকে লজিস্টিক সাপোর্ট বলে থাকি। এ ধরনের অর্থনৈতিক পলিসি প্রতিটি দেশেই রয়েছে। আইএমএফ যেটা বলে আসছে, সেটা হলো ভর্তুকি কমানো। নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকি এটা এনবিআর-এর বিষয় না। ভর্তুকি আসলে এক ধরনের সাপোর্ট। আমরা ভর্তুকিকে সাপোর্টের পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এ সব সাপোর্ট ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবো, যাতে আমাদের উৎপাদনে ধস না নামে। সেটা আইএমএফও জানে। আমরা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। একসাথে সবকিছু মানা যাবে না। একইভাবে এনবিআরও যেখানে করছাড় কিংবা সাপোর্ট দিয়ে আসছে, সক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পদক্ষেপ নেয়া হবে। পলিসি সাপোর্টের ক্ষেত্রে এনবিআর এক জায়গায় স্থির থাকে না। প্রতি বছর বাজেটে সাপোর্ট দিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।