সুদের হার ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত শেয়ারবাজারের বড় চ্যালেঞ্জ
শাকিল রিজভী
[১] শেয়ারের পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য ৩ শতাংশ মূল্যসীমা বেধেঁ দিয়েছে, যা একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ রেগুলেটর হিসেবে চিহ্নিত করে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না, তার মানে কি সামনে আরও কমবেÑ এ জাতীয় প্রশ্ন মানুষের মনে জন্ম দেয়। কোনো কোম্পানি যদি খারাপ করে, তার রিপোর্ট খারাপ আসেÑ সেক্ষেত্রে তা কমতে হবে। আগে থেকে যদি শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, তাহলে নিলামে সকল বিনিয়োগকারীরা নির্ধারিত ৩ শতাংশেই সেল অফার দেওয়ার চেষ্টা করবে। যা মানুষের সাইকোলজিক্যাল প্যানিকে পরিণত হবে। কারণ এতে মানুষের আর্থিক ক্ষতি হবে না। কিন্তু কেনা-বেচার সময় মানুষের আত্মবিশ্বাসের অভাবে পতন হয়ে থাকে।
[২] শেয়ারবাজারের পতন সারাজীবন হবে। স্টক এক্সচেঞ্জ যতোদিন আছে ততোদিন এভাবেই চলবে। কোনো বড় সেলার যদি দাম বাড়ার পর তা বিক্রি করেন তাহলে শেয়ারবাজার পতন হবেই। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ভালো থাকাকালীন বিদেশি পোর্টপোলিও থেকে কিছু শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তাই বিনিয়োগকারী কমেছে। আর সুদের হারও বেড়েছে। দাম বাড়লেই মানুষ শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যার ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী কমার সঙ্গে সঙ্গে পতন ঘটে।
[৩] মূলত শেয়ারবাজার না বোঝার কারণে এ রকম কথা বলে থাকে। শেয়ারবাজার নিয়ে আন্দোলন করলে ক্ষতি হয়। কারণ আপনি আন্দোলন করে জানিয়ে দিলেন যে, আপনি খুব খারাপ অবস্থায় আছেন। এর ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা আর বাজারে আসবে না। এখানে আন্দোলন করার কিছু নেই। বিষয়টি হলো, এখানে যে যার বুদ্ধিমত্তার বিচারে কোম্পানির অবস্থা বুঝে শেয়ার কেনা-বেচা করবে। গার্মেন্টস কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দলীয় কর্মীরা আন্দোলন করবে। আবার খেয়াল করবেন যে লাভ করে সে আনন্দ মিছিল করে কাউকে জানায় না। সুতরাং শেয়ারবাজারের পতনের দাবি দাওয়া করাটা বোকামি।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্যায় করেছে এমন কিছু ঘটলে সেক্ষেত্রে আমরা ডিএসই’র কাছে জানাতে পারি। শেয়ারবাজারের কোম্পানির পারফর্মেন্সের ওপর নির্ভর করে শেয়ারের দাম কমবে বা বাড়বে। এমনকি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, আবহাওয়া ইত্যাদির ওপর নির্ভর করেই দাম কম ও বেড়ে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়। শেয়ারবাজার খুব সেনসিটিভ জায়গা, যারা এটা না বুঝে তাদের এখানেবিনিয়োগ করতে আসা উচিত নয়। অল্প টাকা নিয়ে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা বেশি। যারা শেয়ারবাজার না বুঝে তাদের মনে একটি ভুল ধারণা থাকে যে, তারা যে গ্যারান্টেড দামে শেয়ার কিনেছে সে দাম কমলে তাদের সে টাকা ফেরত পাবে। আসলে কেউ সে টাকা দেবে না।শেয়ারের দাম যদি জিরো হয়ে যায়, তাহলে সে টাকা কোনো আন্দোলন করেও কেউ পাবে না। শেয়ার কেনা ও বিক্রির দায়িত্ব বিনিয়োগকারীর। কেননা তাকে কেউ জোর করেনি সে তার নিজ দায়িত্বে কিনেছে। অকশনে একটা জিনিস কেনার পর যদি দেখেন জিনিসটা ভালো না তখন আপনি প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কারণ বেস্ট প্রাইসে কেনার আগে আপনার উচিত ছিলো ভালো করে যাচাই করার। শেয়ারবাজারে আপনি ক্ষতি বা লাভ করলে দায় আপনার আন্দোলন সমাধান এনে দিবে না। তবে বিএসইসিতে কোনো বস্তুনিষ্ঠ পরিবর্তন থাকলে আমরা তা জানাতে পারি। যেমন, বিনিয়োগকারীদের কোনো একটি আইন প্রয়োগ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই কিছু সুবিধা প্রয়োজন। স্টক এক্সচেঞ্জে সুনির্দিষ্টভাবে কোন কাজটা বিনিয়োগকারীদের জন্য করা উচিত তা সরাসরি বলা এভাবে আন্দোলন করাটা অযৌক্তিক। কোনো বিনিয়োগকারী আন্দোলন করে না।
[৪] আমাদের শেয়ারবাজারের চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যাংকে সুদের হার অনেক বেশি এবং ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ। প্রায় ৪০ শতাংশ লিস্টেট কোম্পানির ব্যাংকিং খাত, কোম্পানির ফাইন্যান্স ইত্যাদি দুর্বল হবার কারণে শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ, সুদের হার ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত হচ্ছে শেয়ারবাজারের বড় চ্যালেঞ্জ। লেখক : শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি। মুঠোফোনে মতামত নিয়েছেন রুদ্রাক্ষী আকরাম