আলতাফ পারভেজ
সাজেকে ভ্রমণ-ক্ষুধার্তদের জন্য এমন আবাসন সুবিধাও নাকি আছে যার ভাড়া দিনে ১৫ হাজার টাকা।
তো, ঘটনা হলো এরকম উন্নত সাজেকের চারিদিককে আরও উন্নত করতে যেয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঐ ইউনিয়নের উদয়পুরে যে নয় জন শ্রমিক মারা গেলেন তাদের ৫ জনের পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।
এরা সবাই ময়মনসিংহ বিভাগের ঈশ্বরগঞ্জের মানুষ। অর্থাৎ শ্রমিক জীবনের তাক্ষণিক ক্ষতিপূরণ। এর আর্থিক দাম এখন সাজেকের একটা ভালো রুমের ভাড়ার সমানও নয়। হয়তো এটা কেবল দাফনের খরচ হিসেবে দেয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটা ভবিষ্যতে ফয়াসালা হবে। আদৌ সেটা হবে কি না কে জানে।
নিহত শ্রমিকদের এই পরিবারগুলোতে এখন মাতম চলছে। সেটা টাকার জন্য নয়, পরিবারের কাজের মানুষটিকে হারিয়ে ফেলায়। প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলায়।
অন্যদিকে, দুঃখ-লজ্জা-ক্ষোভের ব্যাপার হলো এই শ্রমিকদের মৃত্যু জাতীয় পত্র-পত্রিকায় বড় কোন জায়গা পায় নাই। এই শ্রমিকরা কাদের হয়ে কাজ করছিলেন, তাদের কাজের ঠিকাদারদের পরিচয়ও তেমন কিছু জানা গেল না মিডিয়া থেকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের এই উন্নয়ন-আত্মাহুতি মোটেই ভাইরাল হয় নাই। হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই হয়তো। অথচ ঝড়-বৃষ্টিতে সাজেকে পর্যটকরা কয়েকঘণ্টার জন্য আটকা পড়লেও সেটা জাতীয় খবর হয়ে যায়। অতীতে সেরকম দেখিছি বহুবার।
সাজেকের এই দুর্ঘটনা যেদিন ঘটলো সেদিনটা ছিল রানাপ্লাজা দিবস। সেদিন আবারও অনেকে বললেন, রানাপ্লাজায় যা ঘটেছে সেটা গণহত্যাতুল্য ছিল। বাস্তবে সেই ধারাবাহিকতা যে বন্ধ হয় নাই একদিনের সাজেক-ট্র্যাজেডি আমাদের সেটা জানিয়ে দিল।
খাগড়াছড়ির সাংবাদিক বন্ধু সমীর মল্লিকের কাছ থেকে সাজেকে নিহতদের পরিচিতি যোগাড় করতে যেয়ে দেখলাম এই উন্নয়ন শহীদের বয়স ১৬ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। এদের সংখ্যাগরিষ্ঠই সুদূর ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে শ্রম বেচতে ওদিকে গিয়েছিলেন বা তাদের কোন ঠিকাদার হয়তো নিয়ে গিয়েছিল। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তে এরা পরিবার বাচাতে শ্রম বিক্রি করতে বেরিয়ে ছিলেন। কিন্তু নিরাপদে ঘরে ফেরা হলো না তাদের। কক্সবাজার থেকে সাজেকের উপর দিয়ে রামগড় পর্যন্ত যে সীমান্ত সড়ক হচ্ছে সেই কাজের বলি হলেন এসব শ্রমিক। আরও সরাসরি বললে উন্নয়নের মহাসড়ক মসৃন করতে যেয়ে শহীদ হয়ে গেলেন তারা।
উন্নয়ন ব্যাপারটা যে ঐতিহাসিকভাবে এক শ্রেণির আত্মাহুতির বিনিময়ে অন্য শ্রেণির সুবিধা ও উল্লাসের ব্যাপার মাত্র সেটাই জানিয়ে দিল সাজেকের উদয়পুর ট্রাজেডি।
সাজেক অঞ্চলের সাংবাদিকদের কাছে এই ঘটনার পূর্বাপর আরও অনুসন্ধান প্রত্যাশা করছি। এই ঘটনায় আটজন শ্রমিক আহতও হয়েছেন। খাগড়াছড়ির সাংবাদিক ভাইদের কাছে এই আহতদের চিকিৎসার বিষয়েও ফলো-আপ রিপোর্ট চাই। আসুন, এই শ্রমিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরনের দাবি তুলি। লেখক : কলামিস্ট