রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাড়তি সুবিধা ও অ-আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পরিকল্পনা
সোহেল রহমান : [১] দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ও রিজার্ভ বাড়াতে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রেরিত রেমিটেন্সের বিপরীতে বিদ্যমান প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও কিছু আর্থিক সুবিধা এবং অ-আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সারাবিশে^ বর্তমানে নানা ধরনের সঙ্কট বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে তৈরি পোশাক রপ্তানি খাত থেকে। এরপরই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স। ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরত্ম্যে রেমিটেন্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়। এ অবস্থায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কী কী করা যায়Ñ সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অতি সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সভায় বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। [৩] সূত্র মতে, এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ-এর মনিটরিং সেল বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এতে বলা হয়েছেÑ বেস্ট রেমিটার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা; রেমিটারদের সন্তানদের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে কোটা ব্যবস্থা প্রচলন করা; রেমিটেন্স প্রেরণকারী বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের ফি হ্রাস করা; রেমিট্যান্স প্রেরণ ও গ্রহণের কাজে জড়িত ব্যাংক/এক্সচেঞ্জ হাউসের শাখাগুলোকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা রাখার ব্যবস্থা করাÑ বিশেষ করে উৎসবকালীন লম্বা ছুটি থাকার সময়ে; পাসপোর্টসহ দূতাবাসে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেমিটেন্স কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার প্রদান; রেমিটেন্স প্রাপ্তি সহজীকরণ (ডকুমেন্টাশন হ্রাসসহ); বিদেশে বাংলাদেশী মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউস/ব্যাংকে বাংলা ভাষী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং প্রবাসীদের জন্য সরকারের সেবাসমূহের প্রচার করা ইত্যাদি।
[৪] সূত্র জানায়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশে প্রবাস আয়ের প্রবাহকে আরো উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পরবর্তীতে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রণোদনার হার ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সুচিন্তিত এ নীতি-কৌশল অবলম্বনের ফলশ্রুতিতে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রকোপ সত্বেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বেশি প্রবাস আয় অর্জিত হয়। ওই বছর বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবাস আয় প্রথমবারের মত ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বিগত তিন অর্থবছর ধরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধিও ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
[৫] সূত্র মতে, অবৈধ পথে প্রবাস আয় প্রেরণ তথা হুন্ডির প্রবণতা রোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়া হলেও হুন্ডি ব্যবসায়িদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আরো উচ্চ হার প্রদান করে থাকে। এ প্রেক্ষিতে প্রবাস আয় প্রেরণকারীদের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের সঙ্গে নন-ফাইননাসিয়াল সুবিধা প্রদান করলে সেটি প্রবাস আয় বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
[৬] গত ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষনে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাস আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।
[৭] সূত্র জানায়, এভাবে ধারাবাহিক উন্নতির ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রবাস আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলার। ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশে^ সব দেশের মধ্যে নবম প্রবস আয় গ্রহণকারী দেশে উন্নীত হয়েছে।
[৮] জানা যায়, রেমিটেন্সের বিপরীতে প্রণোদনা প্রদানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৬৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।