মুজিব রহমান
বিজেপিকে ৩৭০টি আসন পেতে হলে বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো জরুরী ছিল। সেই দাঙ্গায় মুসলিমদের হাতে যত হিন্দু মারা যাবে বিজেপির আসন তত বাড়বে। ফরিদপুরের দুজন শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় ভারতের বিজেপি ডুগডুগি বাজানো শুরু করেছিল। তারা হিসাবের খাতা খুলে বসেছিল কতটি দাঙ্গা হয়, কতজন হিন্দু মারা যায়। সেই সংবাদ বাড়িয়ে প্রচার করে ভোট বাড়াবে খুবই আতঙ্কে ছিলাম, মুসলিমরা বোকামি করে বিজেপির ফাঁদে পা দিয়ে বসে কি না! যাক তেমনটা ঘটেনি।
ঘটনাটা বুঝতে কিছু বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা দরকার
১) কালী মন্দিরটিতে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না। প্রতিমার শাড়ি আগুনে পুড়েছে। কালী মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানো থাকেই। এখনো জানা যায়নি কিভাবে প্রতিমার শাড়িতে আগুন লেগেছে। ২) আগুন লাগার সংবাদ শুনে শ্রমিকরাই আগুন নেভাতে আসে। সামান্য আগুন দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন কোন প্রশ্নও উঠেনি। ৩) এর আগে স্কুলের টয়লেট নির্মাণে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ উঠে। নেতারা শ্রমিকদের উপর চাপ তৈরি করে ও বিতর্ক করে।
৪) চাঁদা চাওয়া নেতাই ওয়ার্ড মেম্বার এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা যিনি শ্রমিক খুনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
৫) শ্রমিকদের মারধর শুরু করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান যিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা, ইউএনওর উপর হামলাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। দুবার তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করা হলেও আদালত পুনর্বহাল করে। তিনিই শ্রমিকদের মারধর শুরু করেন।
বিষয়টা যে সাম্প্রদায়িক নয় তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। একটা মাস্টারপ্লান করে সাম্প্রদায়িক সংঘাত লাগাতে পারলে ভারতের একটা গোষ্ঠীর পোয়াবারো হবো। চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়তো সে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ছক মোতাবেক শুরু করেছিলেন। কিন্তু মুসলিমরা ফাঁদে পা না দেয়ায় দেশে দাঙ্গা লাগেনি।
যারা ধর্মীয় সংগঠন করেন তারা একটু উগ্র হন। অন্ধ বিশ্বাসের কারণে অন্য ধর্মের প্রতি তাদের ঘৃণা থাকে। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণির মানুষ সাধারণত ধর্ম-কর্ম কমই করেন। অতীতেও শ্রমজীবী মানুষকে মন্দির-প্রতিমায় হামলা করতে দেখিনি। তারা সব ধর্মের মানুষের বাড়ি ও ধর্মশালা নির্মাণে কাজ করেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বার যদি মারধর শুরু না করতেন তবে এমন খুনের ঘটনা ঘটতো না।
আমি বিস্মিত হয়েছি শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের পক্ষে রাজনীতি করা কোন দল যখন শ্রমিকদের পক্ষে কিছু বলেনি দেখে এবং কোন অনুসন্ধানও করেনি। তারা পাশে দাঁড়ালে সত্যটা আরো আগেই প্রকাশ পেতো। শ্রমিক হত্যার কঠোর বিচার চাই। লেখক : সাবেক ব্যাংকার