শেয়ারবাজারে সূচকের বড় উত্থান
মাসুদ মিয়া: [১] দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতনের পর গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস বড় উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে এক ডজন প্রতিষ্ঠান। [২] এদিকে অধ্যাপক শিবলী দ্বিতীয় দফায় বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছেন, চলতি মাসের শুরুতেই এমন গুঞ্জন শোনা যায়। তবে তার পুনঃনিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় বাজারে নানান গুঞ্জন ছড়ায়। শেয়ারবাজারেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পাশাপাশি আরও কয়েকটি ইস্যুতে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হয়। ঈদের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ১০ কার্যদিবসের মধ্যে আট কার্যদিবসেই দরপতন হয়।
[৩] গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় মেয়াদে বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাচ্ছেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এতে লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। দুপুরের মধ্যে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগ পাওয়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শেয়ারবাজার আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
[৪] এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পতনের মধ্যে থাকা শেয়ারবাজারে হঠাৎ এমন বড় উত্থান হওয়ার কারণ হিসেবে মূল কারণ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ। তারা বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শেয়ারবাজারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অধ্যাপক শিবলী পুনঃনিয়োগ পাবেন কি পাবেন না, তা নিয়ে বাজারে নানা গুঞ্জন ছিল। সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি আরও ৪ বছরের জন্য চেয়ারম্যান থাকছেন, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর বাজারে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। যে কারণে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। [৫] গতকাল লেনদেনে অংশ নেওয়া একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। এমনকি লেনদেনের এক পর্যায়ে ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব, ততটাই বেড়ে যায়। লেনদেনের শেষদিকে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দামে ক্রয়াদেশ এলেও বিক্রি আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। [৬] এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি চলে আসে। দিনের লেনদেন শেষে ৭৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রায় একশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর ফলে দিনের লেনদেন শেষে একদিনে দাম বাড়ার তালিকা যেমন বড় হয়েছে, তেমনি সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
[৭] দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৬১৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৩৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
[৮] এদিকে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ছয়শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬১৩ কোটি ৯৫ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১১ কোটি ৪৩ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১০২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাভেলো আইসক্রিমের ২৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। [৯]এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আইটি কনসালটেন্ট, ওরিয়ন ইনফিউশন, গোল্ডেন সন, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, কোহিনুর কেমিক্যাল, বিচ হ্যাচারি এবং সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস। [১০] অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৮৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭১টির এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা।