মুজিব রহমান
লালনের একটি গানের দুটি লাইন লিখে ফেসবুক স্টোরিতে দেওয়ায় ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করার অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ওই যুবকের নাম সঞ্জয় রক্ষিত (৪০)। তিনি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার একজন স্বর্ণশিল্পী। ভেদরগঞ্জ থানার এহেন আচরণ বিস্ময়কর ও বাকস্বাধীনতার উপর মারাত্মক আঘাত।
সঞ্জয়ের ফেসবুকের স্টোরির স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, তিনি সেখানে লিখেছেন সুন্নতে খাতনা দিলে যদি হয় মুসলমান, তাহলে নারী জাতির কি হয় বিধান। এই দুটি লাইন লালনের সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ গানের। স্থানীয় কয়েকজন মৌলবাদী জঙ্গি দাবি করেছেন, এই লেখার মাধ্যমে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা মৌখিক অভিযোগ করেছেন। একজন ওসি জঙ্গিদের মৌখিক অভিযোগে সঞ্জয়কে আটক করে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠায়।
এমনিতেই অর্থের প্রলোভন ও অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার ভয়ে দেশ থেকে বাকস্বাধীনতা উঠেই গিয়েছে। এটা লেখকদের মনোজগতে বিরাট পরিবর্তন এনেছে। রাজনৈতিক নেতাদের মতোই লেখকগণও জনসম্পৃক্তহীন হয়ে পড়েছে। আজ যদি লালন এই গানটি গাইতেন তাহলে কি তিনিও গ্রেফতার হয়ে জেলে যেতেন! একটি লালনগীতি পোস্ট দেয়াও ভেদরগঞ্জের পুলিশ সহ্য করতে পারল না? কিছু জঙ্গি মতাদর্শের মানুষ দেশেতো আছেই যারা ধর্মের নামে মানবতার বিপর্যয় ঘটায়। তাদের দমনের পরিবর্তে লালনের গান পোস্ট দেয়ায় কোন ব্যক্তিকে দমনের চেষ্টা ভয়ানক। এটা লালনকে দমনেরই চেষ্টা।
সঞ্জয় রক্ষিত হিন্দু বলেই কি তাকে আটক করা হল? আমাদের কাছে এটা বিস্ময়কর। সংখ্যালঘু হয়ে লালনের গান পোস্ট করা যাবে না কিংবা সংখ্যালঘুরা লালন শুনতে পারবে না— দেশে কি এমন আইন রয়েছে? মিনিমাম বাকস্বাধীনতা না থাকলে মানুষের বিকাশ ঘটবে কিভাবে? প্রশ্নটিতো সঞ্জয় রক্ষিতের না— লালনের। এর জবাব মুসলিম জঙ্গিদের হাতে নেই বলেই তারা খুন করে। ভেদরগঞ্জের পুলিশ কি জঙ্গিদের লাঠিয়ালে পরিণত হয়েছে?
গতকাল ছিল হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন। পুলিশ ও জঙ্গিরা কেন সেই দিনটিকেই বেছে নিল? সঞ্জয় রক্ষিতের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একইসাথে ওসির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানাছি। নইলে এই ধারায় যারাই লালনগীতি পোস্ট করবে তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। যারাই বিজ্ঞানমনস্ক হবে ও মুক্তচিন্তা করবে তাদেরই আটক করা হবে। লালনের গানও মুসলিম জঙ্গিদের অনুভূতি তছনছ করে দিতে পারে! কতোটা নির্বোধ ও মূর্খ ওরা তা ভাবলেও অবাক হতে হয়।