ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ। কারণ আমরা যা রপ্তানি করি তার কাঁচামাল আমদানি করতেই হয়। মেশিনারিজ আমদানি করতে হয়। আমদানি হলেই রপ্তানি বাড়বে। আমদানি হলেই উৎপাদন বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে জিনিসপত্রের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে পরিমাণমতো আমদানি বৃদ্ধি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমদানি বৃদ্ধির দরকার আছে। তবে আমদানি করতে গিয়ে যেন আমাদের ডলারের যে সংকট আছে, সেটা যেন হঠাৎ করে কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ডলার সাশ্রয় বা যথাযথ নিয়ম মেনে যদি আমদানি বাড়ানোর যায়, তাহলে অবশ্যই অর্থনীতিতে একটা ইতিবাচক ধারা আসবেই।
তবে আমার কাছে একটু কনফিউজিং মনে হলো, এখানে এনবিআরের বলার কী হলো যে, আমদানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। তাহলে তো তাদের আমদানি শুল্ক দেখাতে হবে যে, এতো আমদানি হয়েছে, আমরা এতো শুল্ক পেয়েছি। তাই আমরা বলতে পারি যে আমদানি বেড়েছে। আমদানি বাড়ছে কিনা, এটা তো বলবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলসি খোলা, এলসির ক্লিয়ারেন্স, অর্থনীতির সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি কীÑ বাংলাদেশ ব্যাংক তা বলতে পারবে। আমদানি-রপ্তানিকারক, বাণিজ্যমন্ত্রণালয় বলতে পারবে ভালো করে। তবে আমদানি বাড়তেই হবে। বাড়াতে হচ্ছে। কারণ উৎপাদন কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।
দেশের ডলার সংকট যদি কমে আসে তা ভেরি গুড। এটাই তো দরকার। আমদানি বড় একটা খাত যেখানে ডলারের প্রয়োজন। সেখানে আমদানি বাড়াতে গেলে ডলার পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। ডলার পরিস্থিতি উন্নতি হলে আমদানি বৃদ্ধি অবশ্যই প্রত্যাশিত। কিন্তু ডলার পরিস্থিতির যদি উন্নতি না হয়, ডলার সংকট যদি আবারও বাড়ে, তাহলে তো মনে করতে হবে কোথাও কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে।
তবে খাদ্যপণ্য আমদানিকেই আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ খাদ্যের দাম আমাদের এখানে বেশি। এছাড়া খাদ্যের অনুসঙ্গ সার আমদানিও প্রয়োজন। মোটকথা খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে যা জড়িত, তা আমদানিতে অগ্রাধিকার পেতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস বা জ্বালানি খাতের জিসিপত্র আমদানি আমাদের করতেই হয়। কোনো অবস্থাতেই বিলাসপণ্য আমদানিতে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। খাদ্যপণ্য জীবন-জীবিকার জন্য প্রয়োজন, জ্বালানি প্রয়োজন আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সবসময় অগ্রাধিকার পাবে বা পাচ্ছে। পয়সা আছে বলে কিছু মানুষ কিনতে পারবে, খেতে পারবেÑ তাদের জন্য বিলাসদ্রব্য, বিদেশি ফল ইত্যাদি আমদানি হবে আত্মঘাতী। লেখক : এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান