থানা আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া সরকারি সব প্রতিষ্ঠানেই সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : [১]শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয় আরো ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোথাও আংশিক নিষেধাজ্ঞা আবার কোথাও পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সাংবাদিক ছাড়াও সাধারণ মানুষের প্রবেশেও পূর্বানুমতির আদেশ রয়েছে।
[২] বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের তথ্য মন্ত্রণালয় এক্রিডিটেশান কার্ড ১ বছর ও ৩ বছর মেয়াদে প্রদান করে। যারা এই কার্ডের বাইরে তারা যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করবেন তার নামে পাস ইস্যু করে দুপুর ২ টার পরে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেন।
[৩] পুলিশ হেডকোয়ার্টার বা ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে সাংবাদিকরা পূবানুমতি ব্যাতিত প্রবেশ করতে পারেন না। এমনকি জনগণও নয়।
[৪] জাতীয় সংসদে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক্রিডিটেশন কার্ড দিয়েও সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারে না। এরজন্য সংসদের আলাদা পাস সংগ্রহ করতে হয়।
[৫] জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও সাংবাদিক প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনেও একই অবস্থা, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েও সাংবাদিক প্রবেশে বিধি নিষেধ রয়েছে।
[৬] সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিমান ও রেল ভবন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সব জায়গাতেই সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
[৭]বিজিবি সদরদপ্তর, আনসার সদর দপ্তর, ফায়ার ব্রিগেড সদর দপ্তর। দুর্নিতি দমন কমিশন প্রত্যেক জায়গাতেই সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব স্থানে পূর্বানুমতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে হয়। এমনকি যে কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে সেই কর্মকর্তার সঙ্গেই দেখা করা যায়।
[৮] বাংলাদেশের সংবিধানে ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও সরকারি অফিসগুলোতে এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
[৯] ২৯ মার্চ ২০০৯ সালে তারিখে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। সেখানে বলা হয়েছে কিছু নির্ধারিত তথ্য ছাড়া সকল তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার রয়েছে। এই আইন তথ্য প্রদানে বাধা প্রদান করে এমন আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা হয়েছে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন ইউনিটে তত্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগেরও বিধান করা হয়েছে।
[১০] এ বিষয়ে সাবেক কম্পট্রোলার জেনারেল ও অর্থ সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, জনস্বার্থে অনেক অফিস প্রবেশে সামায়িক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তবে এই জনস্বার্থ বিষয়টি রিজনেবল হতে হবে। সাধারণত সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানেই জনগণের প্রবেশে কোন বাঁধা নেই। দাপ্তরিক গোনীয়তা আইন ১৯২৩ অনুযায়ী দেশে কিছু ‘নিষিদ্ধ স্থান’ রয়েছে। এসব জায়গায় প্রবেশ যে কারো জন্যই দন্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংক বা দুদক এসব ‘নিষিদ্ধ স্থানের’ মধ্যে পড়ে না। দাপ্তরিক গোনীয়তা আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ স্থান হিসেবে ঘোষিত আদেশের কপি বা এ সংক্রান্ত নোটিশ নিষিদ্ধ স্থানটির প্রবেশ পথে কিংবা কোনও দৃাষ্টি আকর্ষক স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। তবে তথ্য আইন অনুযায়ী “তদন্তাধীন কোন বিষয় যাহার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাতে পারে”- এরূপ তথ্য প্রদানে যে কেউ বিরত থাকতে পারে। এছাড়াও কেপিআই নীতিমালা রয়েছে। তবে সেটির ও রিজন থাকতে হবে।
[১১]সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম তাঁর “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আইন” শীর্ষক গ্রন্থে বলেন, “জনস্বার্থে পাবলিক ডকুমেন্টস দেখার অধিকার সাংবাদিকের থাকে। কিন্তু এটি যথার্থ পাবলিক ডকুমেন্টস কি-না এই প্রশ্নে সাংবাদিক সেটি দেখা হতে বিরত হতে পারেন।
[১২] এ বিষয়ে সাবেক সাংবাদিক নেতা মোল্লা জালাল বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সাংবাদিক প্রবেশে যখন তখন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেন। এটি সাধারণ মানুষের তথ্য অধিকারের পরিপন্থি। কোন কারণ ছাড়া তথ্য প্রদানে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য।