ইসলামী বীমার বিধিমালা ২০২৪-এর খসড়া শরীয়াহ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি বীমা-সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান পরিপালন করতে হবে
সোহেল রহমান : [১] ইসলামী বীমা (তাকাফুল) ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি ইসলামী শরীয়াহ্ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে শরীয়াহ্ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি বীমা-সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধানসহ প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান পরিপালন করতে হবে। এছাড়া ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানিকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শরীয়াহ্ কাউন্সিল গঠন করতে হবে। একইভাবে ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ একটি নিজস্ব শরীয়া বোর্ড গঠন করতে পারবে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্তৃক প্রণীত ইসলামী বীমা (তাকাফুল) বিধিমালা ২০২৪-এর খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে। [৩] খসড়া অনুযায়ী, ইসলামী বীমা ব্যবসা করতে হলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে যেসব কাগজ-পত্র জমা দিতে হবে, সেগুলো হচ্ছেÑ ইসলামী বীমা পলিসি/পরিকল্পের পদ্ধতি, সুবিধা, প্রিমিয়াম ইত্যাদিও বিস্তারিত ও স্পষ্ট বিবরণ; ইসলামী বীমার পরিকল্প আর্থিকভাবে টেকসই/কার্যকরÑ এ মর্মে একজন পেশাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি/একচ্যুয়ারি কর্তৃক প্রদত্ত রিপোর্ট; পরিকল্পসমূহ ইসলামী শরীয়াহ্ নীতিমালার ভিত্তিতে কি নাÑ এটি নিশ্চিত করতে বীমা কোম্পানি কর্তৃক গঠিত এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত শরীয়াহ্ কাউন্সিলের প্রত্যয়নপত্র; লাইফ ইসলামী ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত বীমা প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত একচ্যুয়ারি কর্তৃক পরিকল্পসমূহ কার্যোপযোগী মর্মে প্রত্যয়নপত্র এবং কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য দলিলাদি।
[৪] এছাড়া আবেদনকারীকে বীমা আইনের ধারা ৪৩ এবং বিধি-বিধান ও এতদসংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সলভেন্সি মার্জিন প্রবিধানমালার শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
[৫] লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবসার শর্ত পূরণ, আর্থিক সঙ্গতি, শরীয়াহ্ অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হবে। অনুমতিপ্রাপ্ত বীমাকারীকে বীমা আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স নবায়ন অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতি পঞ্জিকা বছরে বীমাকারীকে শরীয়াহ্সম্মতভাবে ইসলামী বীমা পরিচালিত হয়েছে মর্মে শরীয়াহ্ কাউন্সিল কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র কর্তৃপক্ষ বরাবর দাখিল করতে হবে।
[৬] অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে, শরীয়াহ্ পরিপালন ছাড়াই ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে, তাহলে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিয়ে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে।
[৭] কোনো প্রচলিত লাইফ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান অনুমতি সাপেক্ষে একইসঙ্গে ইসলামী বীমা ব্যবসা করতে চাইলে দুই ধরনের ব্যবসার হিসাব পৃথকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। [৮] খসড়া আইনে শরীয়াহ্ কাউন্সিল গঠন-এর বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ইসলামী বীমা ব্যবসার অনুমতিপ্রাপ্ত বীমাকারীকে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদনক্রমে শরীয়াহ্ বিষয়ক পারদর্শী ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট শরীয়াহ্ কাউন্সিল গঠন করতে হবে। শরীয়াহ্ কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে একজনের অর্থনীতি, বাণিজ্য বা ব্যবসা ও বীমা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। শরীয়াহ্ কাউন্সিল-এর কাজ হচ্ছেÑ শরীয়াহ্ নীতিমালা অনুসারে পরিকল্প তৈরি করাসহ ইসলামী বীমা ব্যবসা পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তত্ত্বাবধান ও সুপারিশ প্রদান করা।
[৯] খসড়া আইনে শরীয়াহ্ বোর্ড গঠন-এর বিষয়ে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে একটি শরীয়াহ্ বোর্ড গঠন করতে পারবে। পাঁচ সদস্যের এ শরীয়াহ্ বোর্ডের সভাপতি হবেন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কর্তৃপক্ষের একজন সদস্য; বোর্ডেও সদস্য সচিব হবেন কর্তৃপক্ষের একজন উপ-পরিচালক বা পরিচালক এবং অবশিষ্ট তিনজন হবেন শরীয়াহ্ বিষয়ে পারদর্শী। গঠিত শরীয়া বোর্ডের মেয়াদ হবে তিন বছর। শরীয়াহ্ বোর্ডের কাজ হবেÑ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত বীমাকারীর পরিকল্প ও বিনিয়োগসহ যাবতীয় কার্যক্রম শরীয়াহ্সম্মতভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি নাÑ তা পর্যবেক্ষণ-পূর্বক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা।