সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে
সোহেল রহমান : [১] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়ছে। অর্থবছরের মূল বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
[২] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের কম দামে সার সরবরাহ করতে গিয়েই মূলত সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি ব্যয় হয়। এছাড়া কৃষি খাতে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে যে সেচ দেয়া হয়, এর বিলের ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়। এছাড়া আখ চাষে সামান্য ভর্তুকি রয়েছে। [৩] অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, এর বাইরে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা বাবদ ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৩০ কোটি টাকা সার, বীজ ও চারা বাবদ বরাদ্দ দেয়া হবে। কৃষকদের নতুন জাতের বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা, এক ধরনের ফসল থেকে অন্য ধরনের ফসল চাষে আগ্রহী করতে এ সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। অবশিষ্ট ৭০ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে। খরা, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই অনুদান দেয়া হয়। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে।
[৪] এদিকে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও কৃষি ভর্তুকির জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা যায়।
[৫] কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন, জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়া এবং এলএনজির দাম বাড়ার কারণে ভর্তুকি বেড়েছে।
[৬] এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ার দাবি করা হলেও বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের প্রতিবেদনের (পিংক শিট) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেশ কম ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন ইউরিয়া সারের দাম ছিল ৩৫১.৩০ ডলার। এছাড়া প্রতি টন ডিএপির দাম ৫৮৩.৮০ ডলার, প্রতি টন টিএসপির দাম ৪৫৪.৪০ ডলার এবং প্রতি টন এমওপির দাম ছিল ২৮৯.৪০ ডলার।
[৭] অন্যদিকে গত বছর সারের দাম বাড়ায় ২০২৩-এর এপ্রিলে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ায় সরকার। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপি সারের দাম ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা, ডিএপির দাম ১৬ টাকার পরিবর্তে ২১ টাকা ও এমওপি সারের দাম ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
[৮] ওই সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সারের আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং সারের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পণ্যটির দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
[৯] কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে দেশে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া টিএসপি ৭.৫ লাখ টন, ডিএপি ১৬ লাখ টন ও এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে ৯ লাখ টন। এর মধ্যে ১০ লাখ টন ইউরিয়া, ১ লাখ টন টিএসপি ও ১ লাখ টন ডিএপি দেশেই উৎপাদন করে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
[১০] চলতি অর্থবছরে গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত ইউরিয়া ১৫.৮৫ লাখ টন, টিএসপি ৬.৭২ লাখ টন, ডিএপি ১৩.০৫ লাখ টন ও ১০.৩৪ লাখ টন এমওপি সার আমদানি হয়েছে বলে জানা যায়।