টানা তিন মাস বাড়ার পর কমলো রপ্তানি এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমেছে ১১৮ কোটি ডলার
মো. আখতারুজ্জামান : [১] টানা চার মাস দেশের রপ্তানি আয় ছিলো ঊধ্বমূখী। এর কয়েক মাস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি ডলারের বেশি। এর মধ্যে জানুয়ারিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৭২ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিলে এসে কমলো রপ্তানি। মাসটিতে রপ্তানি হয়েছে ৩৯২ কোটি ডলারেরও কম, যা আগের মাস মার্চে ছিল ৫১০ কোটি ডলার। [২] অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ১১৮ কোটি ডলার। মার্চের রপ্তানি ছিল গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৪ কোটি ডলার কম। ওই মাসে রপ্তানির পরিমাণ ৩৯৬ কোটি ডলার।
[৩] হঠাৎ রপ্তানি আয় এত কমে যাওয়ার কারণ মূলত ঈদের ছুটি। গত ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। ঈদ উপলক্ষে গড়ে এক সপ্তাহের বেশি কারখানা বন্ধ ছিল। যার প্রভাব পড়েছে উৎপাদন ও রপ্তানিতে।
[৪] জানতে চাইলে পোশাক খাতের বড় প্রতিষ্ঠান হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম শামসুদ্দিন বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ঈদের ছুটিই মুখ্য। তবে আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে এপ্রিলের একটি অংশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহ। তীব্র গরমের কারণে অনেক শ্রমিক কারখানায় অনুপস্থিত ছিলেন।
[৫] আবার যারা কারখানায় এসেছেন, তাদের কেউ কেউ শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন। এ কারণে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রা ফিরে না এলে চলতি মে মাসেও রপ্তানি কিছুটা কম হতে পারে।
[৬] রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইতিবাচক গতি থেকে সরে এপ্রিলের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় নেমে এসেছে। এপ্রিলের প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের মতো ঋণাত্মক। অবশ্য একক মাসের হিসাবে ঋণাত্মক হলেও জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই ১০ মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
[৭] এ সময় মোট ৪ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। যদিও সার্বিক হিসাবেও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানির পরিমাণ ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম।
[৮] দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত থেকে এপ্রিল মাসে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ মাসে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্র ছিলো ৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।
[৯] তবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সার্বিক রপ্তানির গড়ের চেয়েও বেশি। গত ১০ মাসে পণ্যটির রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
[১০] মোট ৪ হাজার ৪৯ কোটি ডলার এসেছে পোশাক রপ্তানি থেকে। তবে পোশাকের রপ্তানিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওই সময়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ২৭৪ কোটি ডলার। আবার পোশাকের মধ্যে ওভেন পণ্যের চেয়ে নিটের পরিস্থিতি অনেক ভালো।
[১১] পোশাকের প্রবৃদ্ধির প্রায় সবটাই নিট খাত থেকে এসেছে। এ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেনে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
[১২] গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের মধ্যে হোমটেক্সটাইলের রপ্তানি ক্রমেই তলানিমুখী। চলতি অর্থবছরের গত ১০ মাসে বিভিন্ন ধরনের হোমটেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে কম প্রায় ৩১ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের ৯৪ কোটি ডলার থেকে রপ্তানি ৭০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ডলারের হোমটেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
[১৩] অন্যান্য পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৭ শতাংশ। ৭৭ কোটি ডলার থেকে রপ্তানি ৭২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। চামড়া ও চামড়াপণ্যের রপ্তানি কমেছে আরও বড় ব্যবধানে। ১০১ কোটি ডলারের রপ্তানি নেমে এসেছে ৮৭ কোটি ডলারে। যার হার ১৩ শতাংশ।
[১৪] লক্ষ্যমাত্রা থেকে কম হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি। তবে ৬ শতাংশ বেড়েছে কৃষিপণ্য রপ্তানি। লক্ষ্যমাত্রা থেকেও পণ্যটির রপ্তানি ১ শতাংশ বেশি হয়েছে। মোট ৭৭ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের বিভিন্ন কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে।