মাসুদ রাণা
বাঙালীর কোনো ইণ্ডিজিনিয়াস নৃত্য নেই একমাত্র সিলেটের ধামাইল ছাড়া। কিন্তু এর সাথে সারা বাংলার তেমন পরিচয় নেই বলে বিদেশী নাচের ব্যর্থ নকল করে থাকে বাঙালী, যদিও এতে তেমন কোনো তৃপ্তিও পায় না এ-জাতি।
সম্প্রতি, আশাবাদ নিয়ে লক্ষ করা যাচ্ছে যে, সিলেটের ধামাইল নাচ ক্রমশঃ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। আর, ধামাইল বাঙালীর নিজস্ব নাচ বলে তাতে তারা আত্মিক টান ও আত্মবিশ্বাস অনুভব করে।
আমি মনেকরি, সিলেটকে নেতৃত্ব দিতে হবে পূর্ব-পশ্চিম উভয় বাংলায় ও বিশ্বের যেখানে যতো বাঙালী আছে, তাদের সবার মাঝে ধামাইল নাচের প্রদর্শন, প্রশিক্ষণ ও প্রচলন ঘটানোর মধ্য দিয়ে।
মনে রাখতে হবে, ধামাইল শুধু গান নয় কিংবা নৃত্য নয়। ধামাইল হচ্ছে গীত, বাদ্য ও নৃত্যের ত্রি-সমন্বয়ের একটি পূর্ণ সঙ্গীতের ‘বাহিরানা’ (হেমাঙ্গ বিশ্বাসের টার্মটি ধার করে বলছি), যা কোনো বিত্তবান পৃষ্ঠপোষকের গৃহে বা ঘরে জন্ম নেওয়া ‘ঘরানা’ নয়।
ধামাইল কোনো ঈশ্বর বা দেতবাকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যেও উদ্ভূত, চর্চিত কিংবা বিকশিত নয়। এটি হচ্ছে নিতান্ত মানুষের জন্য মানুষের সম্মিলিত গীত-বাদ্য-নৃত্য তথা সঙ্গীত।
ধামাইল হচ্ছে হাতের তালির তালে, সমবেত কণ্ঠে গীত গেয়ে, ছন্দে-ছন্দে ঘূর্ণায়মান নৃত্যে সক্রিয় আবেগ প্রকাশ ও বিনিময় করার একটি শিল্পকলা।
সুতরাং আমি প্রস্তাব করছি; জাতীয় ধামাইল ধামাইল এ্যাকাডেমি গড়ে তুলুন, যেখানে ধামাইল সঙ্গীত – গীত, নৃত্য ও বাদ্য – চর্চা, প্রশিক্ষণ, গবেষণা, উন্নয়ন ও প্রসারে সম্মিলিত মেধা ও প্রয়াসের সৃষ্টিশীল সমন্বিত প্রয়োগ সম্ভব হয়।